ঘুমের মধ্যেও হতে পারে হার্ট ফেইলিওর

2 hours ago 5

একসময় মনে করা হতো, হার্ট ফেইলিওর শুধু বয়স্কদেরই হয়। কিন্তু এখনকার চিকিৎসকরা বলছেন, এই সমস্যা যে কোনো বয়সেই হতে পারে, এমনকি ঘুমের মধ্যেও। হার্ট ফেইলিওর এমন একটি জটিল অবস্থা, যার লক্ষণ ও প্রভাব ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন। তাই সময়মতো রোগ চেনা ও প্রতিরোধের জন্য সচেতন থাকা খুব জরুরি।

ভারতের খ্যাতনামা কার্ডিওলজিস্ট ডা. সুমন্থ চট্টোপাধ্যায় প্রতিদিন ইন-কে জানিয়েছেন, হার্ট ফেইলিওর আসলে একটি ‘স্পেকট্রাম ডিজিজ’ বা বিস্তৃত রোগের ধরন। অর্থাৎ, এটি কারও ক্ষেত্রে হালকা উপসর্গে শুরু হলেও অন্য কারও জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।

হার্ট ফেইলিওর কী?

হার্টের মূল কাজ হলো শরীরের প্রতিটি অঙ্গে রক্ত পাম্প করে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করা। যখন হার্ট ঠিকভাবে রক্ত পাম্প করতে পারে না, বা শরীরের চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত চাপ নিতে হয়— তখনই তাকে হার্ট ফেইলিওর বলা হয়।

হার্ট যদি পেছনের চাপ সামাল দিতে না পারে, তবে রক্ত ফুসফুসে জমে যায়। এতে শ্বাসকষ্ট, হাত-পা ফুলে যাওয়া, পেট ব্যথা বা ক্ষুধামন্দার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।

আর যদি হার্টের সামনের দিকের চাপ বেড়ে যায়, তখন শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত ও অক্সিজেন পৌঁছায় না। এতে মাথা ঝিমঝিম করা, কিডনির সমস্যা বা অবশভাব দেখা দিতে পারে।

হার্ট ফেইলিওরের ধরন

Reduced Ejection Fraction (HFrEF) : এখানে হার্টের পাম্পিং ক্ষমতা কমে যায়।

Preserved Ejection Fraction (HFpEF) : হার্ট স্বাভাবিকভাবে পাম্প করতে পারে, কিন্তু চাপ বেড়ে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়।

নারী না পুরুষ- কে বেশি ঝুঁকিতে?

বিশ্বজুড়ে পুরুষদের মধ্যে হার্ট ফেইলিওরের ঝুঁকি বেশি। কারণ : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ধূমপান ও মদ্যপান। এসব কারণে হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে পাম্পিং ক্ষমতা কমে যায়।

নারীদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে ‘প্রিজার্ভড ইজেকশন ফ্র্যাকশন’ ধরনের হার্ট ফেইলিওর বেশি দেখা যায়। সাধারণত ৬০ বছরের পর বয়সজনিত কারণে হার্টে চাপ বেড়ে এই সমস্যা হয়, যদিও পুরুষদের তুলনায় তা কম।

প্রতিরোধ ও যত্নের উপায়

ডা. সুমন্থ চট্টোপাধ্যায়ের পরামর্শ অনুযায়ী, হার্ট ফেইলিওর বা হার্ট অ্যাটাক— দুটোর ক্ষেত্রেই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করলে জীবন রক্ষা সম্ভব।

হার্ট সুস্থ রাখতে করণীয়

- নিয়মিত রক্তচাপ, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা করুন।

- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন ও পুষ্টিকর খাবার খান।

- ধূমপান ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন।

- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা শরীরচর্চা করুন।

- শরীরে অস্বাভাবিক ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট বা ফোলা দেখলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

হার্ট ফেইলিওর যে শুধু বৃদ্ধদের রোগ, তা নয়- এটি যে কারও হতে পারে। তাই বয়স নয়, সচেতনতা ও জীবনযাপনের অভ্যাসই হার্টকে সুস্থ রাখার মূল চাবিকাঠি।

Read Entire Article