ঘুমের অনিয়ম আজকাল নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের চাপ, মানসিক অস্থিরতা কিংবা স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণে অনেকেই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। অথচ পর্যাপ্ত ঘুম শরীর-মন সুস্থ রাখার অন্যতম প্রধান শর্ত। এ অবস্থায় প্রশ্ন জাগে, ঘুমের মান উন্নত করতে কোন ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর?
চীনের হারবিন স্পোর্ট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করেছেন। ৩০টি র্যান্ডমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়ালের তথ্য ঘেঁটে তারা জানিয়েছেন, নিয়মিত যোগব্যায়াম বা ইয়োগা ঘুমের মান উন্নত করতে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাদের মতে, সপ্তাহে দুদিন অন্তত ৩০ মিনিটের কম সময় উচ্চ-তীব্রতার যোগব্যায়াম করলেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়।
বিশ্লেষণে বিশ্বের এক ডজনেরও বেশি দেশের আড়াই হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে দেখা গেছে, যোগব্যায়ামের পর হাঁটাহাঁটি এবং এরপর রেজিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ ঘুমের মান উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এসব ব্যায়াম মাত্র ৮ থেকে ১০ সপ্তাহ অনুশীলন করলেই ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।
গবেষকরা বলছেন, যোগব্যায়ামকে স্পষ্টভাবে অ্যারোবিক বা অ্যানারোবিক ব্যায়াম হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা কঠিন। কোন কৌশল ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এর প্রভাব ভিন্ন হতে পারে। তাই কিছু গবেষণায় অ্যারোবিক ব্যায়ামকে কার্যকর বলা হলেও, অন্য গবেষণায় যোগব্যায়ামকে সেরা সমাধান হিসেবে দেখা গেছে।
যোগব্যায়ামের উপকারিতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে গবেষকরা উল্লেখ করেন, এটি হৃৎস্পন্দন বাড়ায়, পেশি সক্রিয় রাখে এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এভাবে শরীরের প্যারাসিমপ্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় হয়, যা শরীরকে শান্ত করে গভীর ঘুম আনতে সাহায্য করে। এমনকি যোগব্যায়াম মস্তিষ্কের তরঙ্গেও প্রভাব ফেলে বলে কিছু গবেষণায় উল্লেখ আছে।
তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, ঘুম-সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান সবার জন্য এক নয়। কারণ, ঘুমের সমস্যার ধরন ও ব্যক্তিভেদে তার কারণ ভিন্ন। তাই যোগব্যায়াম ঘুমের মান উন্নত করার একটি কার্যকর উপায় হলেও, একে একক সমাধান হিসেবে ধরা ঠিক হবে না।
গবেষণাটি আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘স্লিপ অ্যান্ড বায়োলজিক্যাল রিদমস’-এ প্রকাশ হয়েছে।