ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ভয়াবহ তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় মেলিসা এখন কিউবায় আঘাত হেনেছে। এর আগে হাইতি ও জ্যামাইকায় মেলিসার আঘাতে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) হাইতির দক্ষিণ উপকূলীয় শহর পেতি-গোয়াভে একটি নদীর পানি উপচে পড়লে ২৫ জনের মৃত্যু হয়। প্রবল বন্যায় শহরের বহু বাড়িঘর ধসে পড়ে। শহরের মেয়র জ্যাঁ বের্ত্রাঁ স্যুব্রেম জানান, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক মানুষ আটকে আছেন।
জ্যামাইকায় বুধবার এক শিশু গাছচাপায় মারা গেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিমন্ত্রী আবকা ফিটজ-হেনলি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় হ্যারিকেন কেন্দ্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার জ্যামাইকায় আঘাত হানার সময় মেলিসা ছিল রেকর্ড-শক্তিশালী এক আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড়। পরে কিউবার উপকূলে প্রবেশের পর এটি ক্যাটাগরি–৫ থেকে দুর্বল হয়ে ক্যাটাগরি–২ এ নেমে আসে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, বুধবার রাতেই এটি বাহামাসের দিকে অগ্রসর হবে।
জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস পুরো দেশকে ‘দুর্যোগ এলাকা’ ঘোষণা করেছেন। ঝড়ে হাজারও বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে, বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে প্রায় ২৮ লাখ মানুষ। জ্যামাইকার কৃষি অঞ্চলের বড় অংশও পানিতে ডুবে গেছে।
দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাউন্সিলের উপসভাপতি ডেসমন্ড ম্যাকেনজি বলেন, এটি জ্যামাইকার জন্য সহজ পথ নয়। অনেকেই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।
কিউবায় বর্তমানে অন্তত ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। গ্রানমা, সান্তিয়াগো দে কিউবা, গুয়ান্তানামো, হোলগুইন ও লাস তুনাস প্রদেশে জারি রয়েছে হ্যারিকেন সতর্কতা। গ্রানমা প্রদেশের গভর্নর ইয়ানেতসি তেরি গুতিয়েরেস জানিয়েছেন, প্রদেশের অনেক এলাকা, বিশেষ করে রাজধানী জিগুয়ানির অংশবিশেষ পানিতে তলিয়ে গেছে।
কিউবার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ধসে পড়া, পাহাড়ি রাস্তায় ধ্বংসাবশেষ জমে যাওয়া এবং ছাদ উড়ে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
জ্যামাইকায় বর্তমানে যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। দেশটির দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জরুরি ব্যবস্থাপনা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক রিচার্ড থম্পসন বলেন, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।
ঝড়ে অন্তত চারটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, একটি বিদ্যুৎহীন থাকায় ৭৫ জন রোগীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণের ক্ল্যারেনডন ও সেন্ট এলিজাবেথ এলাকায় ভূমিধসে সান্তা ক্রুজ শহরের প্রধান সড়ক বন্ধ হয়ে গেছে, ঝড়ে একটি স্কুলের ছাদও উড়ে গেছে।
রাজধানী কিংস্টনের সাংবাদিক রবিয়ান উইলিয়ামস বলেন, আমরা হ্যারিকেন মেলিসাকে এখানে ‘মনস্ট্রাস মেলিসা’ বলছি। কারণ এমন ভয়াবহ ঝড় আমরা আগে কখনো। এটি পুরো দেশ তছনছ করে দিয়েছে।
রাজধানীর বাসিন্দা লিসা স্যাংস্টার বলেন, আমাদের বাড়ির ছাদ উড়ে গেছে ও পুরো ঘর প্লাবিত হয়েছে। বাইরের রান্নাঘর, কুকুরের ঘর ও পশুপাখির ঘের—সব ধ্বংস হয়ে গেছে।
অন্য এক বাসিন্দা মাথিউ ট্যাপার বলেন, রাজধানীর অবস্থা তুলনামূলক ভালো, কিন্তু গ্রামের মানুষদের কথা ভাবলে হৃদয় ভেঙে যায়।
সূত্র: আল-জাজিরা
কেএএ/

2 hours ago
4









English (US) ·