চট্টগ্রামের খুলশীতে নকশাবহির্ভূত ভবন নির্মাণ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন স্থানীয় হাবিব লেনের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পর অভিযান চালিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের নকশা বহির্ভূত অংশ ভেঙে দেওয়া হয়, ভবন মালিককে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু পরে ভেঙে দেওয়া অংশ পুনরায় সংযোজন করে নির্মাণ কাজ চালানোর অভিযোগ উঠেছে নির্মাণাধীন ভবন মালিকের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, নগরীর খুলশী এলাকার হাবিব লেনের শেষপ্রান্তে একটি সাত তলা ভবন নির্মাণ করছেন দেলোয়ার হোসেন নামের এক ব্যক্তি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভবন নির্মাণে ইমারত নির্মাণ বিধিমালা (বিল্ডিং কোড) মানছেন না নির্মাণাধীন ভবনের মালিক। নিয়ম অনুযায়ী ভবনের চারদিকে খালি জায়গা রাখার কথা থাকলেও পুরো প্লটজুড়েই নির্মাণ করা হচ্ছে ভবনটি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অগ্নিকাণ্ড হলে তা মোকাবিলার সুযোগও রাখা হচ্ছে না ভবনটিতে।
পাশের ২৪৬৬/এ প্লটের বাসিন্দা শামিম আরা নওশাদ। কিছুদিন আগে তার স্বামী মারা যান। তিন মেয়ে সন্তানের সবাই বিবাহিত। বাসায় একা থাকেন বয়োজ্যেষ্ঠ শামিম আরা। দেখাশুনার জন্য কয়েকজন কেয়ারটেকার রয়েছেন। পাশের প্লটে ঝুঁকিপূর্ণভাবে ভবন নির্মাণ বন্ধে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (চউক) দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শামিম আরা।

অভিযোগের সূত্র ধরে গত ২৬ আগস্ট চউকের অথরাইজড অফিসার-১ কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু ও চউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ওই ভবনে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ভবনের নিচতলা থেকে সাততলা পর্যন্ত অবৈধ অংশ ভেঙে ফেলা হয় এবং নির্মাণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
ভুক্তভোগী শামিম আরা নওশাদ অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, চউকের উচ্ছেদ অভিযান ও জরিমানার পরও প্রতিবেশী দেলোয়ার হোসেন সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে কোনো প্রকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তিনিসহ আশেপাশের বাসিন্দারা ঝুঁকিতে রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার-১ কাজী কাদের নেওয়াজ টিপু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরপরই সত্যতা নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালিয়েছি এবং ভবনের অবৈধ অংশ ভেঙে দিয়েছি। আমরা ভবনটির কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি। এখন বিল্ডিং কোড না মেনে এবং আমাদের অনুমোদিত নকশা মানা না হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হলে নির্মাণাধীন ভবনের মালিক দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি একটু অসুস্থ। ভবন নির্মাণে আমাদের প্রকৌশলী রয়েছেন। তিনি আপনার (প্রতিবেদক) সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলবেন।’ তবে নিয়ম মেনেই ভবন নির্মাণ করছেন বলে দাবি করেন তিনি।

পরে দেলোয়ার হোসেনের প্রতিনিধি পরিচয়ে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান হিলটন প্রপার্টিজের পরিচালক আশীষ রায় চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা ভবন নির্মাণে নিরাপত্তামূলক সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। আমাদের ভবনের কারণে পাশের কোনো ভবনের ক্ষতি হচ্ছে না। পাশের শামিম আরা নওশাদের প্লটে যাতে আমাদের ভবন থেকে ক্ষতিকর কিছু না পড়ে সেজন্য আলাদা একজন লোক নিয়োগ দিয়েছি দেখার জন্য।’
ভবন নির্মাণ বিধিমালা কিংবা চউকের নকশা মানা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আশীষ রায় চৌধুরী বলেন, ‘পুরো চট্টগ্রাম শহরে চউকের শতভাগ নকশা মেনে কোনো ভবন হয় না। তারপরেও আমরা ৮০ শতাংশ মেনে কাজ করছি।’
এমডিআইএইচ/এমএমএআর/জিকেএস

10 hours ago
6









English (US) ·