ভারতের একটি মিডিয়ায় চট্টগ্রামকে ভারতের অংশে যুক্ত করার বিষয়ে এক সাংবাদিকের উপস্থাপন প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটিও কাউকে দখল করতে দেওয়া হবে না।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বরগুনা ফোরাম কর্তৃক আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শুক্রবার দলটির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহদপ্তর সম্পাদক ও সমন্বয়ক আব্দুস সাত্তার সুমন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তথ্যটি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ড. মাসুদ বলেছেন, ভারত বাংলাদেশে যে আধিপত্য বিস্তার করেছে সেটি ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট থেকে নিঃশেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশে আধিপত্য বিস্তারের আর কোনো সুযোগ ভারত পাবে না। ৫ আগস্ট এদেশের ছাত্র-জনতা শুধু ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেনি আধিপত্য গোষ্ঠীকেও নির্মূল করেছে।
তিনি আরও বলেন, শহীদ মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশের ভূ-খণ্ড নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলার চেষ্টা করলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়ার ঘোষণার পরেই ভারতের ইন্ধনে আওয়ামী লীগ শহীদ মাওলানা নিজামী সহ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের আটক করে সাজানো মামলায় বিচারিক হত্যা করেছে। কারণ জামায়াত নেতারা বেঁচে থাকলে বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করতে দেওয়া হবে না।
এ ছাড়া তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে পরিচালিত হয় না। জামায়াতে ইসলামীতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো অসংখ্য নেতারা রয়েছে। আওয়ামী লীগ একজনকে আটক করলে আরেকজন দায়িত্ব নিতে একদিনও দেরি হয়নি। ফলে জামায়াতে ইসলামী নিঃশেষ করা যায়নি। যারা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের আন্দোলন করে। তাদের দুনিয়ার কোনো শক্তি নিঃশেষ করতে পারে না, পারবে না।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, যারা দেশের জন্য উন্নয়ন করে তারা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যায় না। শেখ হাসিনা দেশের জন্য যতটা না উন্নয়ন করেছে তার চেয়ে বেশি উন্নয়ন করেছে নিজের পরিবার ও দলের। শেখ হাসিনা নিজে প্রকাশ্যে বলেছে, ভারতকে আমি যা দিয়েছি ভারত কখনো তা ভুলতে পারবে না। এজন্যই শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে চলে যান। তিনি যাদের পাকিস্তান চলে যেতে বলেছেন, তারা কেউ পাকিস্তান যায়নি। কিন্তু তিনি ঠিকই ভারত চলে গেছেন।
পাশাপাশি তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক গৌড় ভারতে। সেজন্যই তারা বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের কল্যাণে বেশি কাজ করে এবং করেছে। এজন্যই জনগণ তাদের ভারত পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার ছাত্র-জনতার প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গঠন করতে হবে।
ব্যক্তির চিন্তা চেতনায় সংস্কার করা হলে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না উল্লেখ করে ড. মাসুদ বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহর বিধান কোরআনের আলোকে সংস্কার করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেই শান্তি আসবে। ইসলাম ব্যতিত কোনো মতবাদে শান্তি নাই, শান্তি আসবে না। তাই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে শামিল হতে তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
বরগুনা ফোরামের সভাপতি ডা. সুলতান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সহকারী সেক্রেটারী এডভোকেট মুয়ায্যম হোসাইন হেলাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরগুনা জেলা আমির মাওলানা মহিব্বুল্লাহ হারুন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বরগুনা জেলা সভাপতি সুমন আব্দুল্লাহ। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে বরগুনা ফোরামের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
পরে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পেশাজীবী শাখার সাবেক সাথী ও সদস্যদের কর্মশালায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আধিপত্যবাদ-সাম্রাজ্যবাদের ওপর ভর করে আর কাউকে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না।
৫ আগস্টের বিপ্লবের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে আধিপত্যবাদ-সাম্রাজ্যবাদের কবর রচনা হয়েছে উল্লেখ করে ড. মাসুদ বলেন, আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নাকি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে আবার বাংলাদেশে পাঠাবে! আমেরিকা গণতন্ত্রের চর্চা করে এবং আমেরিকা বিশ্বাস করে জনগণের সরকার জনগণই নির্বাচন করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের চর্চা করে না, গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। তারা যখনই ক্ষমতা দখল করেছে বিদেশি পরাশক্তির ওপর ভর করে ক্ষমতা দখল করেছে। আবার তারা ক্ষমতা হারিয়ে তাদের আপন ঠিকানা ভারতে পালিয়ে গেছে।
ড. মাসুদ নতুন বাংলাদেশ গড়তে উপস্থিত সাবেক সাথী ও সদস্যদের শপথবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।