চট্টগ্রাম বন্দরে আবারও কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, আগের চেয়ে বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। অপারেশনাল কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কনটেইনার খালাস স্বাভাবিক রয়েছে। সক্ষমতা বাড়ায় বর্তমানে কনটেইনার জটের মতো কোনো জটিলতা বন্দরে নেই।
এদিকে, মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) পর্যন্ত বন্দরের অভ্যন্তরে মোট ৪৮ হাজার ৭৫১ টিইইউস কনটেইনার জমা হয়েছে। যার মধ্যে খালি কনটেইনারের সংখ্যা ৬ হাজার ৬৪৭ টিইইউস।
এর আগে গত রোববার রেকর্ড ৪৯ হাজার ১৩১ টিইইউস কনটেইনার জমা হয় বন্দরে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দিন গত ১ জুলাই বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ৩৭৫ টিইইউস। তবে বর্তমানে বেসরকারি ডিপোগুলোতে কোনো কনটেইনার জটিলতা নেই।
আরও পড়ুন
- ফিডার জাহাজ কমাতে চায় বন্দর, ‘প্রক্রিয়াগত জটিলতা’ দেখছে অন্যপক্ষ
- রেকর্ড ৭৫৪৩২ কোটি টাকার রাজস্ব, তবুও পূরণ হয়নি লক্ষ্যমাত্রা
- চট্টগ্রাম বন্দরে দৈনিক গড় কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, বন্দরের কনটেইনার রাখার সক্ষমতা আগের চেয়ে ৬ হাজার টিইইউসের মতো বেড়েছে। এতে বন্দরের অপারেশাল কার্যক্রমে কোনো বিঘ্ন ঘটছে না। তবে নিলামের অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১০ হাজার কনটেইনার বন্দরের মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি রেলের সংকটের কারণে ঢাকা আইসিডিগামী প্রায় দুই হাজার টিইইউস কনটেইনার জমে রয়েছে।
এখন আমাদের সক্ষমতা প্রায় ৫৯ হাজার টিইইউসের মতো। যে কারণে বন্দরে এখন যে পরিমাণ কনটেইনার রয়েছে, তাতে অপারেশনাল কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কনটেইনার খালাস স্বাভাবিক রয়েছে।- বন্দর সচিব ওমর ফারুক
বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউস। গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দর অভ্যন্তরে ৯৬৪৪ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে পণ্য ও কনটেইনারবাহী ৮৬টি জাহাজ বর্তমানে অবস্থান করছে। এরমধ্যে ৭৪টি জাহাজ থেকে বাল্ক পণ্য কনটেইনার খালাস চলছিল।
তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় জাহাজ থেকে ৪৫৮৯ টিইইউস কনটেইনার বন্দরে নেমেছে, ঢাকা আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) থেকে এসেছে ৬১ টিইইউস। অফডকগুলো থেকে রপ্তানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার এসেছে ২৪১৯ টিইইউস এবং খালি কনটেইনার এসেছে ১১৪৩ টিইইউস।
অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫০৫৫ টিইইউস কনটেইনার জাহাজীকরণ হয়েছে। ৬৩ টিইইউস কনটেইনার ঢাকা আইসিডিতে পাঠানো হয়েছে। অফডকগুলোতে আমদানিপণ্য ভর্তি কনটেইনার পাঠানো হয়েছে ৯৫১ টিইইউস। বন্দর থেকে ৯০৪ টিইইউস খালি কনটেইনার অফডকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
পাশাপাশি ১৪৩০ টিইইউস আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার অনচেচিজ সরাসরি আমদানিকারকদের ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। বন্দর অভ্যন্তর থেকে ১৮৭৩ টিইইউস কনটেইনার পণ্য খালাস দেওয়া হয়েছে।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এতদিন বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার রাখার যে সক্ষমতা ছিল চলতি আগস্টে তা আরও বেড়েছে। এখন আমাদের সক্ষমতা প্রায় ৫৯ হাজার টিইইউসের মতো। যে কারণে বন্দরে এখন যে পরিমাণ কনটেইনার রয়েছে, তাতে অপারেশনাল কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কনটেইনার খালাস স্বাভাবিক রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গত কয়েক মাস ধরে রেলের ইঞ্জিন সংকট রয়েছে। যে কারণে ঢাকা আইসিডিগামী কনটেইনারগুলো নিয়মিত পাঠানো যাচ্ছে না। এখনো প্রায় দুই হাজার টিইইউস আইসিডিগামী কনটেইনার বন্দরে আটকে আছে।’
আমাদের ডিপোগুলোতে এখন কোনো জট নেই। আমাদের ১ লাখ ৬ হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে।- বিকডা মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব
‘এছাড়া দীর্ঘদিন নিলামযোগ্য পণ্যের কনটেইনার রয়েছে ১০ হাজার টিইইউস। এসব কনটেনারগুলো অপসারণ করা গেলে বন্দরে কনটেইনার জট নিয়ে আর কোনো সমস্যাই থাকবে না’- যোগ করেন এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন
- চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানিতে বাড়ছে ৩০ শতাংশ শুল্ক
- বেসরকারিতে ঝুঁকছে জ্বালানি খাত, একক নিয়ন্ত্রণ হারাবে বিপিসি
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের ডিপোগুলোতে এখন কোনো জট নেই। আমাদের ১ লাখ ৬ হাজার টিইইউস কনটেইনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) পর্যন্ত জমা রয়েছে ৭৬ হাজার ২৩৭ টিইইউস। এরমধ্যে ৮ হাজার ৭৮২ টিইইউস আমদানিপণ্য ভর্তি, ৭ হাজার ৫০৮ টিইইউস রপ্তানি কনটেইনার এবং বাকি ৬০ হাজার ১৪৭ টিইইউস রয়েছে খালি কনটেইনার।’
‘আমদানি বাড়ায় বন্দরে কনটেইনার জট বেড়েছে বলে শুনেছি’- যোগ করেন রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব।
এমডিআইএইচ/এমকেআর/এএসএম