কোভিড সংক্রমণের বছরগুলোতে তুলনামূলক কম ছিল ডেঙ্গুর প্রকোপ। এরপর থেকে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে ডেঙ্গু। ২০২৩ সালে সংক্রমণ-মৃত্যুতে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। গত বছর শুধু চট্টগ্রামেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪ হাজারের বেশি। মৃত্যুর সংখ্যাও একশ ছাড়ায়। এবার আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, আগস্ট থেকে অক্টোবর মাসে ডেঙ্গুর প্রভাব বেশি থাকে। বছরের ওই সময়ে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে জমাটবদ্ধ পানি থেকে এডিস মশার জন্ম হয়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু ছড়ায়। বিগত বছরের তুলনায় চলতি বছরের এ সময় বৃষ্টি কম হওয়ায় ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমেছে।
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম। গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক কমেছে। তবে রোগীর অবহেলার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে। প্রধান কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা।- চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম। গত বছরের তুলনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার তুলনামূলক কমেছে। তবে রোগীর অবহেলার কারণে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়েছে। প্রধান কারণ দেরিতে হাসপাতালে আসা।’
সিভিল সার্জন বলেন, ‘ডেঙ্গুতে মহানগর ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু কর্নার রয়েছে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের আলাদা কেয়ার নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সিভিল সার্জন অফিস থেকে ডেঙ্গু নিয়ে সব সময় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা হচ্ছে।’
- আরও পড়ুন
- শয্যা সংকটে ফিরছে ডেঙ্গু রোগী, জটিলতা পরীক্ষা-নিরীক্ষায়ও
- সাধারণ উপসর্গের ডেঙ্গু রোগী বেশি, সুস্থ করা যাচ্ছে সহজে
- ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বেশি পুরুষ, মৃত্যু বেশি নারীর
২০২১ সালে পুরো বছরে ২৭১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্তের তথ্য দিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন অফিস। ওই বছর ডেঙ্গুতে মারা যান পাঁচজন। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় পাঁচ হাজার ৪৪৫ জন। ওই বছর এ রোগে মারা যান ৪১ জন। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৮৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হন চট্টগ্রামে। মারা যান ১০৭ জন। চলতি বছরের ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রামে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৯৫ জন। মারা গেছেন ৪২ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষ বেশি হলেও ডেঙ্গুতে প্রাণ হারানোদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্রান্তের হার অনুযায়ী বিগত বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে নিম্নগামী থাকলেও চলতি বছরের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। চলতি বছর অক্টোবর মাসে ১ হাজার ৪২০ জন আক্রান্ত হন। একই সময়ে গত বছর আক্রান্ত হয়েছিল দুই হাজার ৭৭৯ জন। গত বছরের ১৪ হাজার আক্রান্তের মধ্যে নভেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছিল ১ হাজার ২৫৪ জন। এ বছর নভেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭৮২ জন। নভেম্বর মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৪ জন নারী, পুরুষ ও শিশু।
চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ডেন–২ ভ্যারিয়েন্টের। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আবার কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেন–২’ ভ্যারিয়েন্টের সাব-ভ্যারিয়েন্ট। কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।– চমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুর রব জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ডেন–২ ভ্যারিয়েন্টের। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ আবার কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেন–২’ ভ্যারিয়েন্টের সাব–ভ্যারিয়েন্ট। কসমোপলিটন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এসব রোগীর রক্তচাপ কমে গিয়ে শকে চলে যাচ্ছে, বাঁচানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগীকে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। রক্তচাপ যাতে না কমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে আশার কথা হলো, গত বছরের তুলনায় এবার আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটা কম। অবস্থা পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
চিকিৎসকরা আরও বলছেন, ডেঙ্গুজ্বর কমার পরের সময়টা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় অতিরিক্ত দুর্বলতা, বমি, পেট ব্যথা, পাতলা পায়খানা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লালচে দাগ বা র্যাশ হওয়া, প্রস্রাব-পায়খানা বা অন্য কোনোভাবে রক্ত দেখা গেলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
এমডিআইএইচ/এএসএ/জিকেএস