চট্টগ্রামে হচ্ছে দ্বিতীয় তেল শোধনাগার প্রকল্প

6 days ago 7

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। দেশে বর্তমানে বছরে পরিশোধিত-অপরিশোধিত মিলে প্রায় ৭৫ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে, যার অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির কারণে বছরে লাখ লাখ ডলারের বৈদেশিক মুদ্র হারাচ্ছে সরকার।

তিনি আরও বলেন, পরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে প্রায় ১৪ বছর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল) বর্তমানে ভেঙে পড়ার অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে দ্বিতীয় তেল শোধনাগার ইউনিট বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

এর আগে সকাল ১১টায় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড পরিদর্শন করেন তিনি। পরে দুপুরে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, পদ্মা ওয়েল কোম্পানিস লিমিটেড, মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড, যমুনা অয়েল কোম্পানি ও স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপদেষ্টা।

উপদেষ্টা বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৭৫ লাখ টন। তবে মাত্র ১৫ লাখ টন পরিশোধনের ক্ষমতা রয়েছে ইআরএলের। চাহিদা বাড়তে থাকলেও বাড়েনি শোধনক্ষমতা। চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১৯৬৮ সালের ৭ মে ইআরএল উৎপাদন শুরু করা ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের বার্ষিক শোধনক্ষমতা ১৫ লাখ টন। প্রায় দুই দশক আগেই এ স্থাপনাটির আয়ুষ্কাল ফুরিয়েছে। পরিশোধনক্ষমতা নেমে এসেছে ১০ লাখ টনে। স্থাপনাটি ৫৫ বছরের পুরনো। ফলে চাহিদা বাড়ায় এর সংস্কারের পাশাপাশি নতুন একটি ইউনিট স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।

এই বছর নতুন করে ৫০টি নতুন গ্যাস কূপ খনন করা হবে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমরা প্রতি বছর ৬ হাজার কোটি টাকার গ্যাস আমদানি করি। যেই টাকায় আমরা গ্যাস আমদানি করি তার এক ভগ্নাংশও কিন্তু আমরা উৎপাদনের ক্ষেত্রে সংরক্ষণ করি না। ফলে এই বছরেই আমরা ৫০টি নতুন কূপ খনন করব। এ ছাড়া আগামী দুই বছরেও তার পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছি।

বঙ্গবন্ধু টানেলটি অপরিকল্পিত উন্নয়নের অংশ মন্তব্য করে ফাওজুল কবির বলেন, আজ আমি টানেল পরিদর্শন করেছি। সেখানে আগে-পরে কোনো গাড়ি দেখিনি। বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছি এখানে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। এই টানেল ঘিরে যেসব সুফল ভোগ করার কথা তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) বলেছিল, তার কিছুই হয়নি। বরং আমরা আরও পিছিয়ে পড়েছি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে রেলের বিশাল জায়গা রয়েছে। যারা দখল করে রেখেছেন, দখলদারদের কোনো দল থাকতে পারে না। ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রামকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছি, এই শহরে কারও জায়গা কেউ দখল করতে পারেনি। এই শহরে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি যেন কেউ করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রত্যেককে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রামে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসের জায়গা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি সন্ত্রাসী করে, তাহলে আমরা বাধা দেবো। কিন্তু আমাদের প্রতিটি ভালো কাজে বাধা দেন হাইকোর্ট। সুতরাং তাদেরও জনগণের স্বার্থ বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ রইল। চট্টগ্রামের সবুজ আওয়ামী লীগের আমলে ধ্বংস করা হয়েছে। বিপ্লব উদ্যানকেও লুটপাট করা হয়েছিল। আগ্রাবাদের ঢেবার পারে দৃষ্টিনন্দন ওয়াকওয়ে করা যাবে। কিন্তু সেটাও দখল হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের কোথাও এখন খেলার মাঠ নেই। ফলে চট্টগ্রামের অনেক উন্নয়ন করতে হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা লাগবে। সবার আগে চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস, বিদ্যুৎ যেন থাকে, এই বিষয়ে কাজ করতে হবে।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব বলেন, চট্টগ্রামের কোথাও পার্ক নেই। আমাদের ওপর যে অর্পিত দায়িত্ব তা পালনের চেষ্টা করছি। মানুষের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা চলছে। পুলিশে সংস্কার চলছে। আশা করি ভালো সংস্কার হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, কর্ণফুলী নদীর পাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।  

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান বলেন, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে আমরা নতুনভাবে জনবান্ধব সার্ভিস চালু করেছি।

এ ছাড়া বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম, ২৪ পদাতিক ডিবিশনের মেজর মাহমুদ সোহেল, চট্টগ্রাম নগর জামায়াতের আমির ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির ইকবালসহ আরও অনেকে।

Read Entire Article