চাঁদাবাজি ও নিয়োগবাণিজ্যসহ বিস্তর অভিযোগ সোহেলের বিরুদ্ধে 

4 hours ago 6
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১২তম আবর্তনের ছাত্র হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে ২০১৮ সাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান তৈরি করে বহিরাগত সোহেল। মারপিট, চাঁদাবাজি, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি থেকে শুরু করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার মতো নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একসময় ছাত্রলীগের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি ও মারধরের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করলেও বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেয় সোহেল।  অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮ সালে ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১২তম আবর্তনের ছাত্র হিসেবে ভুয়া পরিচয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়ে ওঠে সোহেল। সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি, চাঁদাবাজি ও মারধরের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগ নেতাদের আশ্রয়ে ক্যাম্পাসের আশপাশে চাঁদাবাজি ও সব অনৈতিক কাজের হাতেখড়ি হয় তার। ছাত্রলীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার সুযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না হয়েও ভুয়া স্টুডেন্ট আইডি কার্ড ব্যবহার করে জবিস্থ সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের ২০২২ সালের কমিটির সহসভাপতির দায়িত্বও নেয় সোহেল। এরপর ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ উঠলে ঘটনাটি ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচিত হয়। ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোহেল আদৌ এই বিভাগের ছাত্র নয়।  এরপর শুরু হয় নতুন পরিচয়ে আগমন। শেখ হাসিনা পতনের পর এবার অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ভুয়া আইডি তৈরি করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে সোহেল। এবার যোগ দেয় ছাত্রদলে। বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছে সে। তবে শাখা ছাত্রদল জানায়, এই সোহেলের কোনো পদ নেই। সোহেলের তৈরি ভুয়া আইডি কার্ডে ব্যবহৃত স্টুডেন্ট আইডি নম্বর অনুসন্ধান করে জানা যায়, তা অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ১২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী রোহিত প্রসাদ ঘোষের। রোহিত জানান, তিনি সোহেলকে চেনেন না এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন।  তথ্যসূত্রে জানা যায়, সেহেল ঢাকা প্রফেশনাল কলেজের  ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং ইতোমধ্যে তার বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে। ঢাকা প্রফেশনাল কলেজে যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিশ্চিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষ বলেন,  তিনি আমাদের কলেজের বিবিএ ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ইতোমধ্যে তাদের অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হয়েছে। এদিকে, চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে খুলনার ম্যানগ্রোভ ইন্সটিটিউটের রকি নামের এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী । তিনি বলেন, এক বন্ধুর মাধ্যমে সোহেলের সঙ্গে আমার পরিচয়। তখন আমি জানতাম সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তার পরিচিত লোক আছে এইসব মিথ্যে বলে সে আমাকে এলজিইডিতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে পঞ্চাশ হাজার টাকা নেয়। তার থেকে আমি কোনোভাবেই সে টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল রানা বলেন, আমি ২০১৬ সাল থেকে জবি ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ২০১৭ সালে জবির ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিপার্টমেন্টে পরীক্ষা দিয়ে চান্স পেলেও ভর্তি হয়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রকল্যাণের অধিকাংশ স্টুডেন্ট আমার বন্ধু হওয়ায় আর সবাই আমাকে গ্রহণ করার কারণে আমি তাদের সঙ্গে এই সংগঠনে যুক্ত হয়ে যাই। অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের নামে ভুয়া আইডি কার্ড বানানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, একটা পাবলিকেশনের চাকরির জন্য এ আইডি কার্ডটি বানিয়েছিলাম। ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, ৫ আগস্টের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভিনিংয়ের স্টুডেন্ট পরিচয়ে সে আমাদের সঙ্গে পরিচিত হয়, তখনও আমরা জানতাম না সে বহিরাগত। সে ব্যক্তিগতভাবে ছাত্রদল করতে পারে, তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের পোস্ট প্রাপ্ত কোনো নেতা বা কর্মী নয়। অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সামসুন্নাহার বলেন, এই বিষয়ে যেহেতু কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি, তাই এখনো আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। তবে যার আইডি নম্বর ব্যবহার করে বহিরাগত সেই ছেলে নকল আইডি কার্ড বানিয়েছে, তার উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া।  সংশ্লিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না প্রশ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, কারও বিরুদ্ধে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের নকল আইডি কার্ড ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেওয়ার অভিযোগ আসে, তাহলে অবশ্যই রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে তার সত্যতা যাচাই করা হবে। যদি অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, এই বিষয়ে যদি কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে অবশ্যই সত্যতা যাচাইপূর্বক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Read Entire Article