চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাড়লের চাহিদা তুঙ্গে, বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে

2 months ago 45

ঈদকে সামনে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাহিদা বেড়েছে গাড়লের। তবে এসব গাড়ল হাট-বাজারে নয়, বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে।

খামারিরা বলছেন, গরুর মাংসের চেয়ে গাড়লের মাংসের পুষ্টিগুণ বেশি ও সুস্বাদু হওয়ায় দিন দিন চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া অল্প দামে পাওয়া যায় এসব গাড়ল। এমনকি দিন দিন গাড়ল কোরবানি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

চাঁপানবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের আমারক গ্রামে একবিঘা জমিজুড়ে গাড়লের খামার গড়ে তুলেছে মানবিক উন্নয়ন সংস্থা ‘প্রয়াস’। এখান থেকে অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে শত শত গাড়ল, যা ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশজুড়ে।

‘২০ হাজার টাকায় একটি গাড়ল অর্ডার দিয়েছিলাম। গতকাল বাড়িতে এসে দিয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে দাম হিসেবে ভালোই পেয়েছি। মাংস ২০-২৫ কেজি হতে পারে’

শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের চামা-ভাণ্ডার গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম। গত পাঁচ বছর ধরে গাড়ল পালন করছেন।এবার ঈদকে কেন্দ্র করে ৩০টি গাড়ল প্রস্তুত করেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত ২০টি বিক্রি হয়ে গেছে। আশা করছেন, বৃহস্পতিবারের (৫ জুন) সব গাড়ল শেষ হয়ে যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাড়লের চাহিদা তুঙ্গে, বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে

প্রয়াসের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাজিন বিন রেজাউল জানান, ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার কোরবানিযোগ্য শতাধিক গাড়ল প্রয়াস ফ্যাটেনিং খামারে পালন করা হয়েছে। গাড়লগুলো স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে লালন-পালন করা হয়েছে। খামারে দক্ষ জনবলসহ অভিজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত প্রাণীগুলোর দেখভাল করছেন।

তিনি বলেন, এসব গাড়ল বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে। ভালো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আশা করছি সবগুলো গাড়ল বিক্রি হয়ে যাবে।

‘দিন দিন গাড়লের চাহিদা বাড়ছে। কারণ গাড়ল পালনে জায়গা ও পুঁজি কম লাগে। এছাড়া গাড়লের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু’

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনার মোড় এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‌‌‘ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি বাড়িতে গরু-ছাগল কোরবানি দেওয়া হয়। কিন্তু ইদুল ফিতরের পরে কোরবানির জন্য ৩৬ হাজার টাকায় দুটি গাড়ল কিনেছিলাম। তখন থেকে পালন করছি। পালন করে ভালো লেগেছে। কারণ গাড়ল পালনে অল্প জায়গা প্রায়োজন হয়। এমনকি খুব কম টাকায় তাদের খাবার হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে ইচ্ছা আছে আগামী বছর থেকে গাড়ল কোরবানি দেবো।’

রাজশাহী জেলার বাসিন্দা মোছা. সায়েরা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্বামী বিদেশে থাকেন। বাড়িতে গরু কিনতে যাওয়ার কেউ নেই। হঠাৎ অনলাইনে দেখলাম কোরবানির জন্য গাড়ল বিক্রি হচ্ছে। তাই ২০ হাজার টাকায় একটি গাড়ল অর্ডার দিয়েছিলাম। গতকাল বাড়িতে এসে দিয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে দাম হিসেবে ভালোই পেয়েছি। মাংস ২০-২৫ কেজি হতে পারে।’

ঢাকায় বসবাস করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন। তিনি শখ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি ফেসবুক পেজ থেকে দুটি গাড়ল অর্ডার দিয়েছেন। ইসমাইল হোসেন বলেন, এতদিন শুধু গরু-ছাগল কোরবানি দিয়ে এসেছি। এবার ব্যতিক্রম চিন্তা থেকে গাড়ল কোরবানি দিতে চাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গাড়লের চাহিদা তুঙ্গে, বিক্রি হচ্ছে অনলাইনে

এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. গোলাম মোস্তফা জানান, দিন দিন গাড়লের চাহিদা বাড়ছে। কারণ গাড়ল পালনে জায়গা ও পুঁজি কম লাগে। এছাড়া গাড়লের মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। এমনকী গরুর মাংসের চেয়ে এর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বেশি। 

তিনি বলেন, ফিতাকৃমি ও কলিজা কৃমি নামে গাড়লের দুটি রোগ হয়। এই দুটি রোগ থেকে গাড়লকে বাঁচাতে পারলেই লাভবান হবেন খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার ১৪ হাজার গাড়ল কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে। শুধু স্থানীয় বাজারে নয়, অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে এসব গাড়ল।

এসআর/জিকেএস

Read Entire Article