ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ড (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, ভারত পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের (পাঁচ লাখ কোটি ডলার) শেয়ার বাজার নিয়ে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হওয়ার পথে এগোচ্ছে। অন্যদিকে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি।
বেইজিংভিত্তিক ওয়েইসওয়া অ্যাডভাইজরির প্রধান নির্বাহী চি-আন লিউ বলেন, চীন ও আমেরিকার সম্পর্ককে বিশ্ব অনেকটাই গুরুত্ব দিয়েছে। এবার বিশ্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি (চীন ও ভারত) কীভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সেটা দেখার সময় এসেছে।
তবে ভারত ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ থাকার কারণে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার পথে একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
এশিয়া ডিকোড নামের অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়াঙ্কা কিশোর বলছেন, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে এরই মধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া ভিসা আরও শিথিল করা যেতে পারে এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক চুক্তিও হতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইআইএসএস)-এর দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার প্রতিরক্ষা, কৌশল ও কূটনীতি বিষয়ক সিনিয়র ফেলো অ্যান্টন লেভেস্ক বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতার জন্য ভারত ও চীনের দিকে তাকিয়ে থাকা দেশগুলোর প্রত্যাশা পূরণের জন্য এই দুই দেশের মধ্যে সংলাপ হওয়া উচিত।
তবে ভারত ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ ছাড়াও একাধিক ইস্যু রয়েছে। এর মধ্যে ভারতে বসবাসকারী বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা দালাই লামা ও ব্রহ্মপুত্র নিয়েও দুই দেশের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ করতে চলেছে চীন। ভারত এতে খুশি নয়।
একইভাবে পহেলগাম হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যে উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটাও এই সম্পর্কের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। অন্যদিকে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হয়ে উঠেছে চীন।
সম্প্রতি চীনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। এই তালিকায় ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও। চীন সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের বৈঠক হয়। তিয়ানজিন বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ বক্তব্য রেখেছেন নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে বৈঠকের সময় শি জিনপিং বলেছেন, বিশ্বের পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। ভারত এবং চীন শুধুমাত্র দুই প্রাচীন সভ্যতাই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে জনসংখ্যা বহুল দেশ এবং একইসঙ্গে গ্লোবাল সাউথের অংশও।
তিনি বলেন, দুই দেশের জন্য ভালো বন্ধু হিসাবে থাকা এবং একে অপরের সাফল্যে অবদান রাখে এমন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার কথায়, ড্রাগন এবং হাতি একত্রিত হওয়া উচিত। একই সুর শোনা গেছে নরেন্দ্র মোদীর কণ্ঠেও। তিনি বলেছেন, দুই দেশের সহযোগিতার সঙ্গে ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও উন্নত করতে ভারত বদ্ধপরিকর।
এই দুই রাষ্ট্রনেতার এমন এক সময় সাক্ষাৎ হয়েছে যখন ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শুল্ক ভারতের রপ্তানি খাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। অতীতের সীমান্ত নিয়ে বিরোধের বদলে ভারত ও চীন তাদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউজ’-এর ড. ক্ষিতিজ বাজপেয়ী বলেন, বর্তমান সময়ে বিশ্বে কী কী পরিবর্তন ঘটছে তার ওপর দুই দেশের সম্পর্ক নির্ভর করছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
টিটিএন