চীনের সঙ্গে ভারতের পানিযুদ্ধের আশঙ্কা

2 weeks ago 16
তিব্বতে চীনের মেগা বাঁধ নির্মিত হলে শুষ্ক মৌসুমে একটি প্রধান নদীর পানিপ্রবাহ ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। এতে চীনের সঙ্গে ভারতের পানিযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক  বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। বার্তাসংস্থাটি বলছে, চীনের নতুন মেগা বাঁধ নির্মাণের ফলে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ৪টি সূত্র রয়টার্সকে এ কথা বলেছে। এই আশঙ্কার পর দিল্লি দ্রুত নিজস্ব বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে, যাতে সম্ভাব্য ক্ষতি মোকাবিলা করা যায়। ২০০০ সালের শুরু থেকেই এই নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা করে আসছিল ভারত। তবে অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দাদের তীব্র বিরোধিতার কারণে প্রকল্পগুলো থেমে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ ছিল, এসব বাঁধ তাদের গ্রাম ডুবিয়ে দেবে এবং জীবিকা হুমকির মুখে ফেলবে। তবে, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে চীন যখন বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা দেয় তখন পরিস্থিতি বদলায়। এর ফলে ভারত তার প্রতিদ্বন্দ্বীর পানিনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। আরও পড়ুন : তীর্থযাত্রী বহনকারী ট্রলিতে ট্রাকের ধাক্কায় শিশুসহ নিহত ৮ ভারতের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কোম্পানি এনএইচপিসি ইতোমধ্যেই অরুণাচল প্রদেশের আপার সিয়াং অঞ্চলে সম্ভাব্য বাঁধ স্থাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ১৪ বিসিএম ধারণক্ষমতার এই প্রকল্প সম্পন্ন হলে এটি হবে ভারতের সবচেয়ে বড় বাঁধ। এই বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে এবং বন্যা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে রাখবে। সরকারি বিশ্লেষণ অনুযায়ী, চীনের বাঁধ কার্যকর হলে ভারতে প্রবাহিত বার্ষিক পানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি চীন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে। এর প্রভাবে গুয়াহাটির মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো পানিসংকটে ভুগতে পারে। চীনের প্রকল্প সম্পন্ন হলে তারা প্রায় ৪০ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরাতে পারবে। এতে বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ভয়াবহ প্রভাব পড়বে। তবে ভারতের প্রস্তাবিত আপার সিয়াং বাঁধ ১৪ বিলিয়ন ঘনমিটার পানি সঞ্চয় করতে পারবে, যা শুষ্ক মৌসুমে ছেড়ে দিয়ে ক্ষতি কমাতে সাহায্য করবে। আরও একটি সুবিধা হলো- ভারতের বাঁধ আংশিক খালি রাখলে (৩০ শতাংশ) চীন যদি হঠাৎ অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেয়, সেটি শোষণ করা সম্ভব হবে। এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, তাদের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে তৈরি এবং তা ভাটির দেশগুলোর পানি বা পরিবেশের ক্ষতি করবে না। তারা ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা বজায় রাখার কথাও জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত ১৮ আগস্ট চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ উদ্বেগ উত্থাপন করেছিলেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বাঁধসংক্রান্ত প্রতিযোগিতা দুই দেশের কৌশলগত টানাপড়েন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। পানিসম্পদ নিয়ে ভবিষ্যতের সংঘাত এড়াতে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতা বাড়ানো জরুরি।
Read Entire Article