সম্প্রতি দেশে হঠাৎ করে অনেক মানুষ চোখের লালচে ভাব, পানি পড়া ও অস্বস্তির সমস্যায় ভুগছেন। এটি মূলত এডেনোভাইরাস সংক্রমণের কারণে হওয়া অ্যাকিউট অ্যাডেনোভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস, যা সাধারণত ‘ভাইরাল চোখ ওঠা’ নামে পরিচিত। এটি শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবাইকে আক্রান্ত করতে পারে এবং খুব সহজেই একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে পড়ে।
রোগের কারণ
এডেনোভাইরাস নামক ভাইরাস এ রোগের মূল কারণ। সংক্রমিত ব্যক্তির চোখের পানি, হাত, তোয়ালে বা ব্যবহৃত জিনিসের সংস্পর্শে এলে অন্যের চোখে এটি প্রবেশ করে। গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভাইরাসটি দ্রুত ছড়ায়।
প্রধান উপসর্গ
চোখ লাল হয়ে যাওয়া; প্রচুর পানি পড়া বা হালকা আঠালো তরল নিঃসরণ; চোখে জ্বালা ও বালুর মতো অনুভূতি; পাপড়ি ফোলা ও চোখে ব্যথা; কানে বা ঘাড়ের পাশে লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া। কিছু রোগীর ক্ষেত্রে কর্নিয়ায় দাগ (কেরাটাইটিস) হতে পারে, এতে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয় ও আলোতে অস্বস্তি হয়।
প্রাথমিক ব্যবস্থাপনা
এই রোগ সাধারণত ২ থেকে ৩ সপ্তাহে নিজে থেকে ভালো হয়ে যায়। তবে প্রাথমিকভাবে যেসব নির্দেশনা অনুসরণ করা যেতে পারে—ঠান্ডা পানির সেঁক ও কৃত্রিম অশ্রু (আর্টিফিশিয়াল টিয়ার) ব্যবহার। অতিরিক্ত চুলকানি হলে অ্যালার্জি কমানোর চোখের ড্রপ ব্যবহার।
চোখ পরিষ্কার রাখা এবং হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। প্রয়োজনে সংক্রমণ রোধে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী আই ড্রপ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কর্নিয়ায় গুরুতর সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে হালকা স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
আক্রান্ত ব্যক্তির তোয়ালে, রুমাল, বালিশ ব্যবহার করা যাবে না। স্কুল, অফিস বা ভিড়ের জায়গায় না যাওয়াই ভালো, অন্তত এক সপ্তাহ। বারবার হাত ধোয়া ও চোখে হাত না দেওয়ার বিষয়টি জরুরি। পরিবারের অন্যদের থেকেও যতটা সম্ভব আলাদা থাকতে হবে।
উপসংহার
এডেনোভাইরাল কনজাঙ্কটিভাইটিস বিরক্তিকর হলেও সচেতনতা ও সঠিক পরিচর্যায় এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তাই চোখে লাল ভাব, পানি পড়া ও অস্বস্তি দেখা দিলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সংক্রমণ ছড়ানো রোধে সতর্ক থাকতে হবে।
অধ্যাপক ডা. ইফতেখার মো. মুনির
চক্ষু বিশেষজ্ঞ ও পরিচালক
বাংলাদেশ আই হসপিটাল