চোরচক্রের সক্রিয় সদস্য বিভিন্ন পেশার মানুষ

3 weeks ago 19

চট্টগ্রাম নগরীতে চুরি ছিনতাই বেড়েছে লাগামহীন। ঘটনার আড়ালে রয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষ। চালক, শ্রমিক ছাড়াও এ চক্রে জড়িয়েছে খোদ কসাইও। তাদের মধ্যে কেউ সোর্স, কেউ জমাদার ও চোরাই মামামাল বিক্রেতা। তারা নিজ পেশার আড়ালে চালান তাদের কার্যক্রম। গ্রেপ্তার এড়াতে নগরীর বিভিন্ন থানা এলাকায় বসবাস করেন সক্রিয় চোর চক্রের সদস্যরা। চুরি ছিনতাই সংঘটিত করতে কার্যক্রম চালান নতুন নতুন কৌশলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, আগে এলাকাভিত্তিক চোর চক্রের সদস্যরা চুরি ছিনতাই করত। তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হতো অল্প সময়ের মধ্যে। তবে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তারা নতুন কৌশলে চুরি, ছিনতাই সংগঠিত করে থাকে। যার ফলে থানাভিত্তিক চুরি ছিনতাই সংঘটিত হওয়ার ঘটনার পর সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে তাদের শনাক্ত করতে অন্য থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে সহযোগিতার জন্য পাঠানো হয়।

তথ্যমতে, নগরীর এক থানা এলাকায় চুরি ছিনতাই করতে অংশ নেয় অন্য থানা এলাকা থেকে। ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশ মাঠে অভিযানে নেমে সিসিটিভির ফুটেজ পর্যবেক্ষণের পর ও গোপন সূত্রে নিশ্চিত হয় যে, চুরির ঘটনায় জড়িতরা অন্য এলাকার। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন থানা এলাকায় বসবাসকারীরা বিভিন্ন পেশার মানুষ জড়িত। এলাকাভিত্তিক না হওয়ার কারণে অনেক চুরি মামলা সুরাহা হচ্ছে না এখনো।

সম্প্রতি সদরঘাট থানাধীন একটি বাসার জানালার গ্রিল কেটে ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার, ৮ ভরি রূপা ও নগদ ৫০ হাজার টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন ও স্বর্ণালংকার উদ্ধারপূর্বক চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

গত ৯ সেপ্টেম্বর সদরঘাট থানা এলাকার ১১৪ পূর্ব মাদারবাড়ি রেল গেইট লিগ্যাল হোটেলের পশ্চিম পাশে চেয়ারম্যান সাহেবের বাড়িতে চুরির ঘটনাটি ঘটেছে। এর আগে ৩০ আগস্ট ইফাত আরা চৌধুরী (৪৭) তার বড় বোন ক্যানসার আক্রান্ত লতিফা আফরোজ চৌধুরী (৬১) কে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বাসায় তালা লাগিয়ে ঢাকায় চলে যান।

১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টার সময় ইফাত আরা চৌধুরীর স্বামী মো. নিয়াজ আলী তাদের বাসার গেট খুলতে গিয়ে দেখতে পান, বোন লতিফা আফরোজ চৌধুরীর জানালা খোলা ও জানালার গ্রিল কাটা। অতঃপর আত্মীয় সাজ্জাদ হোসেন মিতুর (৫৫) কাছ থেকে বাসার চাবি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে দেখতে পান, ঘরের জিনিসপত্র এলোমেলো ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।

সদরঘাট থানার অপারেশন অফিসার উপ-পরিদর্শক এইচ এম এরশাদ উল্লাহ কালবেলাকে জানান, তথ্য ও এজাহারের বর্ণনা মতে সর্বমোট প্রায় ৩০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৮ ভরি রুপাসহ নগদ ৫০ হাজার টাকা অজ্ঞাতনামা চোরেরা চুরি করে নিয়ে যায়। পরে সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেক করে দেখা যায়, ৯ সেপ্টেম্বর ভোর ৪টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে এ চুরির ঘটনা ঘটে। উল্লিখিত মালামাল ঘটনাস্থলের আশপাশ ও বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করে কোথাও না পেয়ে ইফাত আরা চৌধুরী ১২ সেপ্টেম্বর থানায় অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশের তথ্যমতে, যে কোনো থানা এলাকায় চুরি ছিনতাই সংঘটিত হলে অন্য থানা এলাকার সক্রিয় চোর ছিনতাই চক্রের সদস্যরা কাজটি সংগঠিত করতে অংশ নেয়। গ্রেপ্তারের পর আসামিদের থেকে পাওয়া তথ্যে চুরি ছিনতাই কাজের পেছনে বিভিন্ন পেশার মানুষের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। চালক, বুয়ার পর এবার কসাইয়ের সম্পৃক্তা পাওয়া গেছে। তারা সবাই ঘটনার অন্তরালে থাকেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক সৈয়দ ফখরুল ইসলাম বলেন, চোরচক্রের সদস্যরা চুরি সংগঠিত করার পর নিজনিজ এলাকায় চলে যায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করার পর অফিসার ইনচার্জের নেতৃত্বে মাঠে নামে সদরঘাট থানা পুলিশের একটি দল। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কসাই জুয়েলের বাসা থেকে স্বর্ণ বিক্রির নগদ ৫৮ হাজার টাকাসহ একটি গলার হার উদ্ধার করা হয়েছে। সে নগরীর হাজারী গলিস্থ দশমহাবিদ্যা মন্দির সংলগ্ন দত্ত শিল্পালয় বাকি স্বর্ণগুলো বিক্রির উদ্দেশে রেখে যায়। পরে সেখান থেকে আরও ২টি স্বর্ণের চুড়ি, ওজন ২৪.৯৬ গ্রাম এর সমপরিমাণ গলানো স্বর্ণের অংশবিশেষ উদ্ধার করা হয়।

সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহিম কালবেলাকে বলেন, চোর ছিনতাইকারীরা বিভিন্ন স্টাইলে তাদের কার্যক্রম সংগঠিত করে। তারা সাধারণত বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন পেশার হয়ে থাকে। সদরঘাট এলাকায় ৩০ ভরি স্বর্ণ ও ৮ ভরি রূপা এবং নগদ ৫০ হাজার টাকা চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তারপূর্বক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত আসামি মো. রুবেল প্রকাশ সুমনকে (২৯) কর্ণফুলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে ঘটনায় জড়িত অপর পলাতক আসামি মো. জুয়েল প্রকাশ কসাই জুয়েলকে (৩৮) নগরীর ডবলমুরিং থানা এলাকা থেকে এবং আরেক পলাতক আসামি শিবু ধরকে (৪৪) পাহাড়তলী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে নগদ ৫৪ হাজার টাকা, ১টি স্বর্ণের গলার হার ও ২টি স্বর্ণের চুড়ি। এ ঘটনায় সক্রিয় চোরচক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Read Entire Article