ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সুফিয়া কামাল আবৃত্তি সংসদ আয়োজন করে ‘কবি সুফিয়া কামাল স্মারক আবৃত্তি উৎসব-২০২৪’। এই আয়োজনে জুলাই বিপ্লবে বিতর্কিত অবস্থানের কারণে নিজ বিভাগে বয়কটকৃত আওয়ামী লীগপন্থি এক শিক্ষককে অতিথি হিসেবে রাখায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
রোববার (০১ ডিসেম্বর) কবি সুফিয়া কামাল স্মারক আবৃত্তি উৎসব আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, এ উৎসবে ১ম আন্তঃহল আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, ২য় আন্তঃহল আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, গঠনতন্ত্র প্রকাশ ও কার্যনির্বাহী পরিষদ (২০২৪-২৫) ঘোষণা করা হয়। এর আগে উৎসব উপলক্ষে একটি আমন্ত্রণপত্র প্রকাশ করে সংগঠনটি। এই আমন্ত্রণপত্র অনুযায়ী উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশাকে প্রধান অতিথি করা হয়। বিশেষ অতিথি হিসেবে কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ছালমা নাছরীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও সুফিয়া কামাল আবৃত্তি সংসদের মডারেটর শাহরিমা তানজিন অর্নিকে রাখা হয়। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি সবাইকেই উপস্থিতও থাকতে দেখা যায়।
অতিথিদের মধ্যকার শাহরিমা তানজিন অর্নিকে রাখা নিয়েই শিক্ষার্থীদের আপত্তি। শিক্ষার্থীরা বলেন, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। চব্বিশের জুলাই আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। কোনো কোনো শিক্ষার্থী দাবি করে বলছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ১৬ জুলাই তার নিজ বাসায় আশ্রয়ও দিয়েছিলেন। আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে গত অক্টোবর মাসে নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সর্বসম্মতিক্রমে তাকে বয়কট করা হয়।
এ ছাড়া, তাকে বিশেষ অতিথি করার সমালোচনায় তার ফেসবুকের বিভিন্ন স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট সামনে নিয়ে এসেছেন শিক্ষার্থীরা। তার এক স্ট্যাটাসে দেখা যায়, গণভবনে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তোলা এক গ্রুপ ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘রাখি তোমায় মন-গহীনে হৃদয় আছে যেথা’।
চলতি বছরের গত ৪ জানুয়ারি প্রকাশিত আল জাজিরার ‘এজ অপোজিশন বয়কট টার্নিশেজ ভোট, ইয়ং বাংলাদেশিজ সিক নিউ ন্যারেটিভ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে মন্তব্য দিতে গিয়ে এই শিক্ষক শেখ হাসিনাকে ডিজিটাল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে একজন সাহসী নেতা হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা অতীতের মূল্যবোধকে ধারণ করেন, তার প্রগতিশীল হৃদয়ে একটি প্রগতিশীল চিন্তাভাবনা রয়েছে, যা বাংলাদেশি সমাজে খুব একটা দেখা যায় না।’ এর বাইরে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের বেশকিছু কর্মসূচিতে তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে।
শাহরিমা তানজিন অর্নিকে সুফিয়া কামাল আবৃত্তি উৎসবে অতিথি করার প্রতিক্রিয়ায় নিজ বিভাগের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহমেদ রিফাত বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেত্রী শাহরিমা তানজিন অর্নি যেখানে তার ডিপার্টমেন্টেই বয়কট, তাহলে সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা কীভাবে এই স্বৈরাচারকে অতিথি হিসেবে রাখে?’
আহমেদ তানভীর নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী বলেন, এই শিক্ষিকার ফেসবুক জুড়ে ছাত্রলীগের তিলোত্তমা-সাদ্দামদের ছবিতে ভর্তি ছিল, ছিল তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের মিছিল কাঁপানোর গল্প। জুলাই বিপ্লবে ছাত্রছাত্রীদের পেটানোর পর তার বাসায় খাবার খেতে যাওয়ার ছবিও তার টাইমলাইনে দেখা যেত। আর তাকে অতিথি বানিয়েই উৎসব করতে হয়?
ঢাবি শিক্ষার্থী কাওসার হামিদ বলেন, ১৫ জুলাই সুফিয়া কামাল হলে মেয়েদের সঙ্গে জঘন্য আচরণ করেছে এই শিক্ষক। যার রেকর্ড তখন ভাইরাল হয়েছিল। ১৫ জুলাইয়ের কিছু হামলাকারী এবং ১৬ জুলাই কিছু ছাত্রলীগের চেলাপেলাকে নিজের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন এই মহান শিক্ষিকা। ফলস্বরূপ আইন বিভাগ থেকে বয়কটের শিকার হয়েছেন। কিন্তু সুফিয়া কামাল হল এতদ্রুত এসব কালপ্রিটদের নরমালাইজ করে দিচ্ছে কেন? সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা কি জানে না যে অর্নিকে আইন বিভাগ তার অপকর্মের জন্য বয়কট করেছে?
আরেক শিক্ষার্থী তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, প্রত্যেক হল, বিভাগের বিভিন্ন মডারেটরদের গণহত্যায় সমর্থনের জন্য পদত্যাগ করানো হয় তখন শাহরিমা তানজিন অর্নিকে কেন পদত্যাগ করানো হয়নি? কারা পদত্যাগ না করিয়ে পুনর্বাসন করছে? তারা কী ওনার জুলাই বিপ্লবের ভূমিকা নিয়ে ওয়াকিবহাল নয়? পদত্যাগ না করিয়ে যারা ফ্যাসিস্টের পুনর্বাসন করায় তাদের ব্যাপারে আমাদের শক্ত অবস্থান নিতে হবে?
ইবরাহিম মাহমুদ নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী, আইন বিভাগের বয়কটকৃত শিক্ষক শাহরিমা তানজিন অর্নি কীভাবে সুফিয়া কামাল হল স্মারক আবৃত্তি উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে যায় তার এবং হলের টিউটর হিসেবে বহাল থাকে তার স্পষ্ট জবাব হল কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। শেখ হাসিনা পালানোর আগের সেকেন্ড পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিরোধিতা করছেন এই শিক্ষক।
অভিযোগগুলোর বিষয় বক্তব্য জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ও সুফিয়া কামাল আবৃত্তি সংসদের মডারেটর শাহরিমা তানজিন অর্নিকে একাধিকবার কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে শিক্ষক শাহরিমা তানজিন অর্নিকে রাখার বিষয়ে বক্তব্য জানতে সুফিয়া কামাল আবৃত্তি সংসদের সদ্য সাবেক সভাপতি আইভি আক্তারকেও কল দিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।