ছোট কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার পরামর্শ বিএপিএলসি সভাপতির

5 days ago 9

নতুন নতুন আইডিয়া ও বিজনেস প্ল্যান দেখে ছোট ছোট কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিজ (বিএপিএলসি)-এর সভাপতি রূপালি হক চৌধুরী। সেই সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো আরও সহজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে বিএপিএলস’র সভাপতি রূপালি হক চৌধুরীর নেতৃত্বে নির্বাহী কমিটির এই বৈঠক ডিএসই টাওয়ারে অনুষ্ঠিত হয়।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ডিএসই থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বৃহৎ সংগঠন বিএপিএলসি’র সঙ্গে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদের এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।

বৈঠকে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত হতে পারেনি। কারণ দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অবহেলা পুঁজিবাজারকে সংকুচিত ও পঙ্গু করে রেখেছিল। সেখান থেকে কিছুটা আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার) আনিসুজ্জামানকে পুঁজিবাজার বিষয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বাজেটে পুঁজিবাজারের জন্য কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আমরা দেখেছি।

তিনি বলেন, বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য বিএসইসিসহ সব পক্ষই আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এছাড়াও রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক নিয়ে টাস্কফোর্স কাজ করছে। আমরা ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ নিজেদের ইতিবাচক পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। আইপিও প্রক্রিয়া সহজীকরণের চেষ্টা করছি। এছাড়াও লিস্টিং পরবর্তী সময়ে কমপ্লায়েন্স নিয়ে অভিযোগুলোর বিষয়ে ডিএসই আপনাদের হয়ে রেগুলেটরদের কাছে তুলে ধরছে।

বিএপিএলসি’র চেয়ারম্যান রূপালি হক চৌধুরী বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর স্বার্থ রক্ষার পাশাপাশি বাজারের স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত করতে বিএপিএলসি সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ডিএসই’র সঙ্গে সমন্বিত প্রচেষ্টা দেশের পুঁজিবাজারকে আরও সুসংগঠিত ও গতিশীল করবে। আমরা বিভিন্ন সময় বাজার উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ড. আনিসুজ্জামান-সহ কমিশন ও সরকারি উচ্চপর্যায়ের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে বৈঠক করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের দেশের পুঁজিবাজারকে অনেক বড় করতে হবে। আর বড় করার জন্য কি করতে হবে, এটি নিয়ে আমরা আরও আলোচনা করতে পারি। আমাদের সমস্যা নিয়ে বেশি আলোচনা করার চেয়ে সমাধানের পদ্ধতি নিয়ে বেশি আলোচনা করা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, নতুন নতুন আইডিয়া ও বিজনেস প্ল্যান দেখে যদি ছোট ছোট কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে আনতে পারি তবে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে যারা তালিকাভুক্ত রয়েছে তাদের কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো আরও সহজ করা প্রয়োজন। আমরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে একসাথে সবাই কাজ করতে চাই।

আলোচনা সভায় দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বিএপিএলসি’র প্রতিনিধিরা লিস্টিং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা, কমপ্লায়েন্স ও সুশাসন কাঠামো, কর কাঠামো, আইপিও প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রিতা এবং যথাযথ মূল্যায়ন, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্যাটাগরি, যোগ্য ও মানসম্পন্ন কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য গ্রিন চ্যানেল প্রবর্তন, রেগুলেটরদের মধ্যে সমন্বয় সাধন, নীতি নির্ধারক, নিয়ন্ত্রক ও কর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত সংলাপ, কোম্পানির মনিটরিং প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, নির্বিঘ্নে এজিএম আয়োজন, আইপিও’র ক্ষেত্রে ডাইনামিক ভ্যালুয়েশন মডেলের অভাব, ইউনিফাইড ডিজিটাল রিপোর্টিং সিস্টেমের অভাব, তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ন্যূনতম করের পার্থক্য এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্র বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনা হয়।

ডিএসইর’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, ভালো উদ্যোক্তারা যদি সঠিক প্রাইসিং পায় তারা পুঁজিবাজারে আসবে। আর আন্ডাররাইটারই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স হিসেবে কাজ করবে। সংশোধিত আইপিও সিস্টেমে ভালো কোম্পানি আসতে পারবে এবং মন্দ কোম্পানিগুলো আটকানো যাবে। গ্রিন চ্যানেল ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে ডিএসই দ্রুত আইপিও অনুমোদন দিতে পারবে। এজিএম নির্বিঘ্নে সম্পাদনের জন্য ডিজিটাল বা হাইব্রিড আকারে আয়োজনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা ও অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে সমন্বয় করে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার মাধ্যমে সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব হবে। ডিএসই এবং বিএপিএলসি’র মধ্যে সহযোগিতা দেশের পুঁজিবাজারকে আরও শক্তিশালী করবে। আমরা বিশ্বাস করি, এই অংশীদারত্ব বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে, নতুন প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে এবং জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।

বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন- ডিএসই’র পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.), সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মোহাম্মদ শাহজাহান, মিনহাজ মান্নান ইমন, রিচার্ড ডি রোজারিও, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমান প্রমুখ।

এমএএস/এমআইএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article