জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠাই হবে আগামীর রাজনীতি

17 hours ago 6

কবি, প্রাবন্ধিক ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ৫ আগস্টের পরে আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে সংখ্যালঘু বলে কিছু থাকবে না। সব নাগরিকের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে, এটা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করাই হবে আগামী দিনের রাজনীতি।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন আয়োজিত এক সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি। বৈষম্যহীন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ দফা দাবির সপক্ষে এ সমাবেশ হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত এবং গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক পাঠের মধ্য দিয়ে এ সম্প্রীতি সমাবেশ শুরু হয়। 

ফরহাদ মজহার বলেন, সংখ্যালঘু বলে কিছু থাকা উচিত নয়। আমরা সকলে এই দেশের নাগরিক। এই মাটিতে আমাদের জন্ম। এই মাটি থেকে কাউকে উচ্ছেদের চেষ্টা হলে ইসলামের দৃষ্টিতে সেটা জুলুম। ইসলাম ধর্মের মধ্যে হিংসা নেই, জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই আছে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের কাছে ৮ দফা দাবি জানানো ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার। সেটা মানা না মানা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে তারা ৮ দফা নিয়ে মাঠে নামলে, কেন তাদের বিরোধিতা করা হবে? রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানানোর অধিকার সবার রয়েছে। কথা বলার অধিকার রাষ্ট্র দেয়, রাষ্ট্রকেই সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে যারা বিভেদের বীজ বপন করে; কথায় কথায় যারা বলে- সংখ্যালঘুরা ভারতের দালাল, ইসকনের সদস্য হলেই জঙ্গি-সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দেয়, গেরুয়া পোশাক পরলেই বিজেপি বলে, যারা এসব বলে তারা কারা- তাদের আমরা চিনতে চাই। আপনারা যে বিজেপি, মোসাদের এজেন্ট নন- সেটার নিশ্চয়তা কী? যারা এসব বলে, তাদের উদ্দেশ্য রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা।

ফরহাদ মজহার বলেন, ইংরেজ আমলের রাষ্ট্রদ্রোহিতার আইন দিয়ে এখনো গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অথচ ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর এই আইনই থাকতে পারে না। গণবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে দেশকে নতুন করে গঠন করতে হবে। কোনো সম্প্রদায়ের মানুষকে যেন আমরা গৌণ না করি, সমস্ত চর্চা মিলে আমরা একটি শক্তিশালী দেশ গড়ব, যেটা এই উপমহাদেশে নজির স্থাপন করবে। দেশে ফ্যাসিবাদকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান এই রাষ্ট্রচিন্তক।

সম্প্রীতি সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রতিটি মানুষের চিন্তা-চেতনা, সংস্কৃতি ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রে সবাইকে নিয়ে একত্রে থাকতে হবে। সবাই মিলে আমরা যেন সম্প্রীতির সাথে বসবাস করতে পারি, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে বিচ্ছিন্নতা, অগ্নিসংযোগ, মারামারি, দখল, রাহাজানির কোনো জায়গা নেই। এমন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে বিচার হতে হবে। অপরাধী সে যে ধর্মেরই হোক, তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, ১৭ বছর পরে দেশ থেকে জালেম বিদায় হলেও জুলুম এখনো রয়ে গেছে। সব জায়গায় সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। দেশে এ রকম বিচার ব্যবস্থা দরকার। অন্যায়ের মোকাবিলা করার জন্য ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

জামায়াতের এই কেন্দ্রীয় নেতা প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একটি ভালো নির্বাচন দেবেন। তবে প্রশাসনে দূষিত লোক রেখে নির্বাচন দিলে লাভ হবে না। সেক্ষেত্রে নির্বাচন অতীতের চেয়ে ভালো হবে না। তাই প্রশাসনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে দূষিত লোকদের বাদ দিতে হবে। সংস্কার শেষে নির্বাচন দিতে হবে, তবে এ জন্য বেশি সময় নেওয়া যাবে না- তাহলে এ সরকারের ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবই মিলে ঐক্য গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা অ্যালবার্ট পি কস্টা।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি সুস্মিতা করের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি শ্রীনন্দ দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন তন্ময় কুমার তনু, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্গ, আব্দুল কাদের, হরিজন সেবক সমিতির কৃষ্ণচরণ, রবিদাস ফোরামের কৈলাস রবিদাস, সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী প্রতিনিধি লিঙ্কন দত্ত, সজীব কুন্ডু তপু, মেঘমল্লার বসু প্রমুখ। 

Read Entire Article