বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলা। ভৌগোলিক কারণে এ জেলার গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন-০৩। নানা দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনটি স্বাধীনতা পরবর্তী কাল থেকে রয়ে গেছে অবহেলিত। জনকল্যাণমুখী নেতৃত্ব না থাকার কারণে হয়নি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন। এ বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই অবহেলিত জনপদের মানুষের সেবা ব্রত নিয়ে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার ৯নং আনুলিয়া ইউনিয়নের সন্তান গাজী আমিনুর রহমান মিনু।
১৯৯৬ সাল থেকে তরুণ বয়সেই রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করে ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির ভুবনে নিজের বলিষ্ঠ অবস্থান অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন তিনি। তারেক রহমানের ভিশন ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠায় তিনি আগামী সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-০৩ আসনের প্রার্থী হতে চান মিনু। দীর্ঘদিন কেন্দ্রীয় রাজনীতি সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে গাজী আমিনুর রহমান মিনুকে ওই আসনে ধানের শীষের কান্ডারী হিসেবে দেখতে চায় সাধারণ জনগন ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে চ্যালেঞ্জিং। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকার গঠন করতে হলে নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে এবং তিনটি শর্তে প্রার্থী চূড়ান্ত হবে। বিপুল টাকার মালিক এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সখ্য আছে, কিন্তু জনবিচ্ছিন্নসহ সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা নেই, এমন প্রার্থী মনোনয়ন পাবেন না। প্রার্থী নির্বাচন করতে সমাজে যাদের ক্লিন ইমেজ, রাজনৈতিক ঐতিহ্য, সংগঠনের জন্য কতটুকু ত্যাগ, সাংগঠনিক দক্ষতা, দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্দিনে অবদান রাখাসহ দলের আদর্শের প্রতি কতখানি অনুগত রয়েছে, এসব খতিয়ে দেখে প্রার্থী বাছাই করলে গাজী আমিনুর রহমান মিনু সেই তালিকায় থাকবে।
দীর্ঘ ১৫ বছর শয়নে-স্বপনে আশাশুনি উপজেলার ওয়ার্ড-ইউনিয়ন-গ্রামে জনগণের সঙ্গে চলাফেরা করেছেন গাজী আমিনুর রহমান মিনু।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন :
গাজী আমিনুর রহমান মিনুর জন্ম ১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারি সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার মধ্যম একসরা গ্রামে। পিতা মরহুম লাল চাঁদ আলী গাজী ও মাতা মৃত রিজিয়া বেগমের স্নেহ ও আদর্শে বেড়ে ওঠেন তিনি। তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় বিছট নিউ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তিনি ১৯৯৭ সালে এসএসসিতে মানবিক বিভাগে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে এইচএসসি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ (১৯৯৯) সম্পন্ন করেন।
শিক্ষাগত উৎকর্ষতার ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে ২০০৩ সালে সেকেন্ড ক্লাসে বিএসএস অর্থনীতি এবং ২০০৪ সালে মাস্টার্স সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে ২০১৮ সালে ঢাকা সেন্ট্রাল ল’ কালেজ থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। আশাশুনি উপজেলা থেকে ছাত্র রাজনীতি শুরু তার।
ছাত্র রাজনীতি ও নেতৃত্বের সূচনা :
রাজনীতির হাতেখড়ি হয় ছাত্রদল থেকে। ১৯৯৮ সালে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে নেতৃত্বের প্রাথমিক পরিচয় দেন তিনি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে নির্বাচনে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০০৩ সালে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রদলের সহ-প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৫ সালে আশাশুনি উপজেলা ছাত্রদলের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান এবং কৃষক দল খুলনা বিভাগীয় কমিটিতে সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে ঢাকা বিজয় নগর সেন্ট্রাল ল’ কলেজে জাতীয়তাবাদী আইন ছাত্র ফোরামের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ২০২২ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-যোগাযোগ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
জাতীয় রাজনীতিতে উত্তরণ :
ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে এসে বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বর্তমান সহ-যোগাযোগ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সাংগঠনিক দক্ষতা, সামাজিক চেতনা, সততা এবং নেতৃত্বের গভীরতা তাকে এই পদে নিয়ে এসেছে।
সংগ্রাম ও নিপীড়নের ছায়া :
রাজনীতির পথ কখনোই সহজ ছিল না গাজী আমিনুর রহমান মিনুর জন্য। সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার কারণে ঢাকার রাজপথ থেকে বারবার জেলে যেতে হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত নাশকতাসহ মোট ১১টি মামলা করা হয়েছে এবং চারবার কারাভোগ করতে হয়েছে। ১৬/১৮/২২ সালে এবং শেষ আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকার রাজপথে মিছিল থেকে ডামি নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালে মিরপুর ১০ মিছিল থেকে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি।
গাজী আমিনুর রহমান মিনু শুধু একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক সাহসী যোদ্ধা। শিক্ষা, সামাজিক সাংগঠনিক দক্ষতা এবং আত্মত্যাগের মিশেলে গঠিত তার রাজনৈতিক জীবনবৃত্তান্ত নতুন প্রজন্মের জন্য অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। আগামী দিনে তার অভিজ্ঞতা, নেতৃত্বগুণ এবং সংগ্রামের ইতিহাস জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এ প্রত্যাশা সাতক্ষীরা-০৩ আসনের সাধারণ মানুষের এবং দেশের আপামর জনতার।
গাজী আমিনুর রহমান মিনু বলেন, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে থেকে দীর্ঘ সময় সুনামের সাথে ছাত্র রাজনীতি করেছি। ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে জীবনবাজি রেখে আন্দোলন করেছি। আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার কারাবরণ করেছি। সাতক্ষীরা-০৩ নির্বাচনী এলাকা বিএনপিকে গতিশীল করতে নিরলস কাজ করে আসছি বলে মানুষও আমাকে গ্রহণ করেছে। মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া দরকার। সে কারণেই আমি ধানের শীষের মনোনয়ন চাই।
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন আন্দোলনে যারা ছিল, যাদের মধ্যে পরিচ্ছন্ন ইমেজ ও দলের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে যার গ্রহণযোগ্যতা আছে- তেমন নেতাকে আগামী নির্বাচনে দলের নমিনেশন দেওয়া হবে। সে হিসেবে দলের প্রত্যাশা অনুযায়ী গাজী আমিনুর রহমান মিনু ২৭ বছর রাজনীতি জীবনে নিজেকে তৈরি করেছেন।