জনস্বাস্থ্যে হুমকি মোকাবিলায় তামাক কর সংস্কার জরুরি

বাংলাদেশে সিগারেট এখনো এতটাই সুলভ যে মাত্র ছয় টাকায় একটি শলাকা কেনা যায়। এই অস্বাভাবিক সহজলভ্যতাই দেশে তামাক ভোগ কমানো ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বড় অন্তরায়। তাই এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কাঠামোর সংস্কার জরুরি। শনিবার (২২ নভেম্বর) বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) উদ্যোগে ঢাকায় জাতীয় নীতি সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এসময় জানানো হয়, গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে দেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহার করেন। টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে তামাকজনিত রোগে দেশে মৃত্যুবরণ করেন প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ২২ শতাংশ। আলোচনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যক্ষতির এ ভয়াবহ চিত্র সত্ত্বেও কম দামের কারণে সিগারেট এখনো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরেই রয়ে গেছে। দেশে বহু স্তরভিত্তিক সিগারেট করব্যবস্থা ধূমপায়ীদের উচ্চ দামের ব্র্যান্ড থেকে নিম্ন দামের ব্র্যান্ডে সরে যেতে সহায়তা করে। ফলে ভোগ কমে না, বরং ব্যবস্থাটি

জনস্বাস্থ্যে হুমকি মোকাবিলায় তামাক কর সংস্কার জরুরি

বাংলাদেশে সিগারেট এখনো এতটাই সুলভ যে মাত্র ছয় টাকায় একটি শলাকা কেনা যায়। এই অস্বাভাবিক সহজলভ্যতাই দেশে তামাক ভোগ কমানো ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার বড় অন্তরায়। তাই এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর কাঠামোর সংস্কার জরুরি।

শনিবার (২২ নভেম্বর) বেসরকারি সংগঠন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) উদ্যোগে ঢাকায় জাতীয় নীতি সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অর্থনীতিবিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গবেষক, সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এসময় জানানো হয়, গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ অনুসারে দেশে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহার করেন। টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে তামাকজনিত রোগে দেশে মৃত্যুবরণ করেন প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ, যা মোট মৃত্যুর প্রায় ২২ শতাংশ।

আলোচনা অনুযায়ী, স্বাস্থ্যক্ষতির এ ভয়াবহ চিত্র সত্ত্বেও কম দামের কারণে সিগারেট এখনো মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভেতরেই রয়ে গেছে। দেশে বহু স্তরভিত্তিক সিগারেট করব্যবস্থা ধূমপায়ীদের উচ্চ দামের ব্র্যান্ড থেকে নিম্ন দামের ব্র্যান্ডে সরে যেতে সহায়তা করে। ফলে ভোগ কমে না, বরং ব্যবস্থাটি ধূমপান চালিয়ে যাওয়ার পথ সহজ করে।

বক্তারা বলেন, কর ফাঁকি, উৎপাদন কম দেখানো, মূল্য কারসাজি এবং ট্র্যাক-অ্যান্ড-ট্রেস ব্যবস্থার অভাব কর আদায় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে রেখেছে। সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তাদের মন্তব্য অনুযায়ী, আঞ্চলিক চর্চা অনুসরণ করে সুনির্দিষ্ট আবগারি কর চালু করা হলে রাজস্ব আদায় নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে।

তামাক শিল্পের লক্ষ্যভিত্তিক বিপণন তরুণদের ঝুঁকিতে ফেলছে বলেও সংলাপে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, দোকানে খেলনা ও মিষ্টির পাশে সিগারেট রাখা, শিশুদের চোখের সমতলে পণ্য সাজানো এবং ই-সিগারেটের সহজলভ্যতা কিশোরদের তামাকমুখী করছে। বক্তারা স্কুল পাঠ্যক্রমে তামাকবিরোধী শিক্ষা সংযুক্ত করা এবং কিশোরদের তামাকপণ্য পাওয়া কঠোর করার সুপারিশ করেন।

আরও পড়ুন
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে ধূমপায়ীদের অযোগ্য ঘোষণা ঐতিহাসিক মাইলফলক
স্কুলের ক্লাস-অ্যাসেম্বলিতে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরতে হবে
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যুগোপযোগী সংশোধন জরুরি: ডা. বিধান রঞ্জন রায়

সংলাপে তামাক অর্থনীতির লিঙ্গ ও সামাজিক প্রভাবও আলোচিত হয়। জানানো হয়, নারীদের ধূমপানের হার বাড়ছে এবং বিড়ি শিল্পে নারী ও শিশুশ্রমের সম্পৃক্ততা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও দারিদ্র্য চক্রকে গভীর করছে। বক্তাদের মতে, কর বৃদ্ধি দেশের জন্য ‘উইন-উইন কৌশল’। এতে তামাক ভোগ ২৫-৩০ শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে এবং একই সঙ্গে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে ও রাজস্ব বাড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শফিউন নাহিন শিমুল বলেন, বর্তমান কাঠামো ধূমপান ছাড়ার প্রণোদনা দুর্বল করে এবং নিম্ন আয়ের মানুষ দাম পরিবর্তনের প্রতি বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় কর বাড়ালে ভোগ কমবে ও রাজস্ব বাড়বে। তার মতে, অবৈধ বাণিজ্য বৃদ্ধির কারণ কর বাড়ানো নয়, বরং দুর্বল আইন প্রয়োগ ও মনিটরিং ব্যবস্থা।

সমাপনী বক্তব্যে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাক কর সংস্কার কেবল প্রযুক্তিগত পরিবর্তন নয়। এটি সামাজিক আখ্যান, রাজনীতি ও অর্থনীতির সম্মিলিত প্রশ্ন।

তার মতে, তামাক উৎপাদননির্ভর জেলাগুলো দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলের মধ্যে পড়া কাঠামোগত বৈষম্যের ইঙ্গিত দেয়। তিনি ধাপে ধাপে বাস্তবসম্মত নীতি গ্রহণ, হালনাগাদ জাতীয় ডেটা অন্তর্ভুক্ত করা এবং তামাকবিরোধী আখ্যানকে সামাজিক মূল্যবোধ ও আধুনিকতার আলোচনায় সামনে আনার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

সংলাপের অংশগ্রহণকারীরা আশা প্রকাশ করেন, একটি সরল, ন্যায়সংগত ও প্রয়োগযোগ্য কর কাঠামো, শক্তিশালী মনিটরিং এবং নির্ভরযোগ্য ডেটা ভবিষ্যতের তামাক করনীতি আরও কার্যকর করবে এবং জনস্বাস্থ্য ও রাজস্ব ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

এমডিএএ/একিউএফ/জেআইএম

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow