জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে আজারবাইজানের বাকুতে একত্রিত হওয়া প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ১০ স্থানে সমাবেশ ও বাইসাইকেল র্যালি করেছে কয়েকটি সংগঠন। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এপিএমডিডি) সহ আরও কয়েকটি সংগঠন এ কর্মসূচি আয়োজন করে।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা এবং উপকূলীয় ৭ জেলার ১০ স্থানে একযোগে সমাবেশ ও সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা জানান, হাজার হাজার মানুষ আজারবাইজানের বাকুতে অনুষ্ঠিত কপ- ২৯ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের কাছে বিভিন্ন দাবি জানাচ্ছেন। একটি নতুন জলবায়ু অর্থায়ন লক্ষ্য নির্ধারণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দ্রুত সরে আসার দাবি জানিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও আমরা গণকর্মসূচি করেছি।
আজ শুক্রবার বিশ্বের ২৪ দেশের ৩০টিরও বেশি শহর ও প্রদেশে ১৫০টিরও বেশি সমন্বিত গণকর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিন সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধরার প্রচার সমন্বয়ক মামুন কবীরের সঞ্চালনায় সমাবেশ হয়। এতে সভাপতিত্ব করে ধরার সংগঠন সমন্বয়ক ও নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা। সমাবেশে অতিথি ছিলেন ধরার নেতা ও রিভার বাংলা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ।
এতে বক্তব্য রাখেন ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের গবেষণা প্রধান মো. ইকবাল ফারুক, সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি আমিনুল ইসলাম টুব্বুস, তুরাগ নদী মোর্চার নেতা লাল মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইক্লিং ক্লাবের সভাপতি মো. তাওহীদুর রহমান প্রমুখ।
- আরও পড়ুন
- জলবায়ু সমস্যা ঘরে আগুন লাগার মতো, এতে কেউ রেহাই পাবে না
- জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য পর্যাপ্ত সহায়তা প্রয়োজন
ইবনুল সাঈদ রানা বলেন, আমরা যখন এখানে জলবায়ু ন্যায্যতার কথা বলছি তখন আমাদের কথাগুলো আজারবাইজানের বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা পশ্চিমা উন্নত দেশগুলোর উন্নয়নের ফলাফল ভোগ করছি। আমরা আমাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হইনি, তোমাদের (পশ্চিমাদের) উন্নয়নের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ফলে তোমাদের দ্বারা হওয়া ক্ষতির পূরণ তোমাদেরকেই করতে হবে। আর তা ঋণ হিসেবে নয়, জলবায়ু তহবিলে নিঃশর্ত ক্ষতিপূরণ আমাদের দিতে হবে।
রিভার বাংলা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ বলেন, জলবায়ু অভিঘাতের সবচেয়ে বড় শিকার বাংলাদেশের জনগণ। উপকূলের মানুষের দিকে তাকিয়ে দেখুন তাদের কষ্ট। সেখানকার নারী, শিশুরা নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। চিকিৎসা পাচ্ছে না। সঙ্গে রয়েছে সুপেয় পানি তীব্র অভাব। তাদের ঘর-বাড়ি ভাঙছে। সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে। বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে উদ্বাস্তু জীবন। আমরা এই অবস্থার অবসান চাই। এসবের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো। তাদেরকে এর দায় নিতে হবে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এজন্য আমদের আওয়াজ তুলতে হবে যার যার অবস্থান থেকে।
সমাবেশ শেষে জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তর, বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ ও গণহত্যা বন্ধ এবং জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বাইসাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র্যালিটি শাহবাহ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার শাহবাগে এসে শেষ হয়।
একই সময় দেশের উপকূল অঞ্চলগুলোতেও জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে সমাবেশ ও সাইকেল র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাগেরহাটের মোংলা, কক্সবাজারের পেকুয়া ও কুতুবদিয়া, পাবনার চাটমোহর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, হবিগঞ্জ সদর উপজেলা, এবং বরগুনা জেলার তালতলী, পাথরঘাটা এবং বরগুনা সদর উপজেলায় জলবায়ু ন্যায্যতার দাবিতে বিশ্ববাসীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে সমাবেশ ও সাইকেল র্যালি হয়।
আরএএস/কেএসআর/এএসএম