মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের আহ্বান ডিসিসিআইয়ের

7 hours ago 6

দেশে সামগ্রিক ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ দুই অঙ্কে উন্নীত করা, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা আনা, ঋণের সুদের হার কমানোসহ স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

পাশাপাশি অবকাঠামো খাতে সমন্বিত উন্নয়ন করা, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর ভ্যাট কমানো এবং শিল্প খাতের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহায়ক জ্বালানি মূল্য নির্ধারণ নীতি প্রণয়ন করা অপরিহার্য।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতির দ্বিবার্ষিক অর্থনৈতিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ দৃষ্টিভঙ্গিঃ বেসরকারি খাতের দৃষ্টিকোণ জুলাই-ডিসেম্বর, ২০২৪’ শীর্ষক একটি সেমিনারে এই আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ।

সেমিনারে ২০২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের অর্থনীতির সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন ও সঞ্চালনা করেন তাসকিন আহমেদ।

তার উপস্থাপনায়, তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, মুদ্রানীতি, মুদ্রাস্ফীতি, বেসরকারি বিনিয়োগ, এফডিআই, কৃষি, শিল্প ও সেবা খাত, সিএমএসএমই, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ, লজিস্টিক অবকাঠামো, দক্ষতা উন্নয়ন এবং আর্থিক খাত তুলে ধরেন। রাজস্ব উৎপাদন এখন একটি উদ্বেগের বিষয় হওয়ায় তিনি আরও কৃচ্ছ্রসাধনের মাধ্যমে সরকারি ব্যয় কমানোর পরামর্শ দেন।

তিনি উদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ দুই অঙ্কে উন্নীত করা, অনাদায়ি ঋণ কমাতে কঠোর নজরদারি, আর্থিক খাতে সুশাসন ও স্বচ্ছতা এবং ঋণের সুদের হার কমানোর পরামর্শ দেন। ডিসিসিআই সভাপতি মুদ্রাস্ফীতি কমাতে বাজার পর্যবেক্ষণ উন্নত করা, অবৈধ সিন্ডিকেট ভাঙতে আইনশৃঙ্খলার কঠোর প্রয়োগ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ওপর ভ্যাট কমানোর পাশাপাশি বিলাসবহুল পণ্যের ওপর ভ্যাট বাড়ানোর প্রস্তাব করেন।

তিনি স্থানীয় ও বৈদেশিক বিনিয়োগ সম্প্রসারণে নীতি সহায়তা অব্যাহত রাখা, অবকাঠামো খাতের সমন্বিত উন্নয়নের ওপর জোর দেন। তিনি আফ্রিকান এবং ল্যাটিন আমেরিকার বাজারকে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম সম্ভাবনাময় রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে অভিহিত করেন। মসৃণ শিল্প পরিচালনার জন্য তিনি শিল্পে নিরাপত্তা, কম খরচের অর্থায়ন এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহের আহ্বান জানান।

তাসকিন আহমেদ বলেন, এসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য, ঋণ পাওয়ার জন্য বিদ্যমান নীতিগুলি সহজ করা, কম খরচের অর্থায়নের জন্য বিকল্প অর্থায়ন ব্যবস্থা চালু করা এবং ডিজিটাল অর্থায়ন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। তিনি জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। সেই সঙ্গে নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং শিল্প ও সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের ওপরও জোর দেন।

প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত (রপ্তানি) সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহিম খান বলেন, বর্ধিত রাজস্ব উৎপাদন এবং রপ্তানিমুখী বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকর্ষণ বিনিয়োগের ব্যবধান কমাতে পারে। বর্তমানে আমলাতন্ত্র এবং বেসরকারি খাতের মধ্যে কোনো ব্যবধান নেই। তিনি এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রপ্তানি প্রতিযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন।

অর্থনীতির জন্য হালকা প্রকৌশল শিল্পকে গেম-চেঞ্জার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হালকা প্রকৌশল খাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা তৈরি এবং সহায়তা করার জন্য গাজীপুরে একটি টেকনোলজি সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিআইডিএস-এর গবেষণা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের শিল্পে সম্মতি বাড়াতে হবে এবং ব্যাপক গবেষণার ভিত্তিতে সরকারি-বেসরকারি সমন্বয় বাড়াতে হবে। রাজস্ব বাড়াতে তিনি কর ও ভ্যাট নেট বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের ওপর জোর দেন, বিশেষ করে চামড়া ও ওষুধ খাতে, কারণ আরএমজির পরে এই দুটি খাতের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।

ডিসিসিআই-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেম সুলাইমান এবং পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

এসআরএস/এমআইএইচএস

Read Entire Article