জলবায়ু ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক নাগরিক সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা)।
দুদিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রোববার (৮ ডিসেম্বর) জলবায়ু ন্যায্যতার লক্ষ্যে উঠে আসা দাবিগুলো উত্থাপন করেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এবং ধরা উপদেষ্টা ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার ও সদস্যসচিব শরীফ জামিল।
রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব দাবি তুলে ধরা হয়। ‘ঢাকা ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে দুদিনব্যাপী জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ শেষ হয়।
মিট দ্য প্রেসে শরীফ জামিল বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর বাংলাদেশ সরকারের নির্ভরতা কার্যত একইভাবে চলমান রয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহণ করে বক্তারা ২৯তম জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত পর্যালোচনা করতে গিয়ে জলবায়ু তহবিল গঠনে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না থাকায় বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, উপকূল থেকে আসা স্থানীয় জনগোষ্ঠী চরম আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা, ভাঙন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নদ-নদী, বনাঞ্চল ও প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্টের ফলে খাদ্য সংকট সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, বাসস্থানসহ বিভিন্ন মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত এবং জীবিকা ও ভিটা হারিয়ে স্থায়ী উদ্বাস্ততে পরিণত হচ্ছে।
এছাড়াও অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, দূষক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যেমন কয়লা, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উপকূলের প্রাণ-প্রকৃতির ওপর এরই মধ্যে চরম বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সমাবেশে রামপাল থেকে শুরু করে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের পাশাপাশি গ্যাস ও এলএনজিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর পরিকল্পনা বাতিলের দাবিও জানানো হয়।
যা আছে ১৩ দফা দাবিতে
১. জনগণের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে স্থানীয় পর্যায়ে অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি করা।
২. জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়নগত চাপের প্রভাবে নারী, আদিবাসী জনগণ এবং প্রান্তিক পেশাদার গ্রুপগুলোর ওপর যে ভিন্ন ও অসম্পূর্ণ প্রভাব পড়ছে তার ঝুঁকি বিশ্লেষণ করা।
৩. জলবায়ু পরিবর্তন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন।
৪. ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের অংশগ্রহণে স্বচ্ছ, বৈজ্ঞানিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশগত এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সীমান্তবর্তী নদীব্যবস্থা এবং দেশের সব নদী, খাল ও প্রাকৃতিক জলাভূমি রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ও সুষম মিঠা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করা।
৬. কোম্পানি, কয়লা প্ল্যান্ট ইত্যাদিকে আইনগতভাবে দায়বদ্ধ করা, যেন তারা ফসিল ফুয়েল এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের ক্ষতিপূরণ দেয়।
৭. কৃষক এবং মৎস্যজীবীদের জীবিকা এবং আয় উপার্জনের উৎস পুনরুদ্ধার করা। বিকল্প জীবিকা অর্জনের উৎস নিশ্চিত করা।
৮. বাঁধ এবং পোল্ডার সংস্কার ও শক্তিশালী করা, পোল্ডারের মধ্যে জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধান এবং সমুদ্র, নদী, জলাভূমি এবং প্লাবনভূমির দিকে খোলামেলা দৃষ্টিকোণ থেকে বিকল্প শহর ও জীবিকা পরিকল্পনার মাধ্যমে ব-দ্বীপের চরিত্র রক্ষা করা।
৯. বাঁধ ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করার আহ্বান, যা অন্তর্ভুক্ত করবে ঋণ চুক্তি, উৎপাদন ভাগাভাগি চুক্তি, পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ), পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাসমূহ।
১০. জনগণের/নাগরিকদের জন্য সামাজিক এবং পরিবেশগত কমপ্লায়েন্সের ওপর নিরীক্ষা চালু করা।
১১. জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন, পরিবহন এবং ব্যবহার সম্পর্কিত সব ধরনের ভর্তুকি শতভাগ প্রত্যাহার করার আহ্বান এবং এসব ভর্তুকি পুনঃনির্দেশিত করা উচিত নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস সম্প্রসারণের জন্য।
১২. সব কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিত্যাগের জন্য একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ প্রণয়ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির উৎসের দিকে সরে আসার আহ্বান।
১৩. জলবায়ু ন্যায় সংস্থা দাবি করছে, বাংলাদেশ উপকূল এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে পানি, বায়ু এবং মাটি দূষণ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
আরএএস/এমকেআর/জিকেএস