জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতে পারে

5 hours ago 4

জলবায়ু পরিবর্তন এখন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, ভৌগোলিক অখণ্ডতা ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গভীর হুমকি বলে মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তিনি বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উপকূল ধ্বংস এবং জলবায়ুজনিত বাস্তুচ্যুতির ফলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে বাংলাদেশকে তার মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতে পারে।

সোমবার (৭ এপ্রিল) ঢাকার ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজে ‘জাতীয় নিরাপত্তার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব’ শীর্ষক এক সেশনে বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা এক মিটার বাড়লে ২১টি উপকূলীয় জেলা ডুবে যেতে পারে। কোটি মানুষ গৃহহীন হবে। কৃষি ও মাছ চাষে ব্যবহৃত নদীগুলোতে লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়বে। জলবায়ু পরিবর্তন মানে শুধু মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে যাওয়া নয়- এটা মানে আমাদের ভূখণ্ড হারানো, জনগোষ্ঠী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া এবং সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়া।

তিনি জানান, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ প্রোটিনের জন্য মিঠা পানির মাছের ওপর নির্ভরশীল। লবণাক্ততা এই জীবনরেখা ধ্বংস করে দিতে পারে। বাংলাদেশ প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ও খরার কারণে জিডিপির এক শতাংশ হারাচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এ হার দ্বিগুণ হতে পারে। ফসলহানি, পানির সংকট ও গণ-বাস্তুচ্যুতি সংঘাত সৃষ্টি করবে বলেও তিনি সতর্ক করেন।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ডুবে গেলে বাকি দুই-তৃতীয়াংশে প্রচণ্ড চাপ পড়বে। অস্থিরতা তখন স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

আরও পড়ুন

এসময় তিনি তেলসমৃদ্ধ দেশের কৌশলগত বিরোধিতা, কিয়োটো চুক্তির ব্যর্থতা ও প্যারিস চুক্তির দুর্বল বাস্তবায়ন নিয়েও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্বের ৮০ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করে জি-২০ ভুক্ত দেশগুলো। অথচ বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিতে সপ্তম অবস্থানে থাকা একটি দেশ, সবচেয়ে বেশি ভুগছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সাল ছিল এ যাবৎকালের সবচেয়ে উষ্ণ বছর। সমুদ্রের উষ্ণতা ও হিমবাহ গলে যাওয়ার হার দ্বিগুণ হয়েছে। বিশ্বের নিষ্ক্রিয়তা আমাদের মতো দেশের জন্য মৃত্যুদণ্ড। সব দেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেও তাপমাত্রা ৩ থেকে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়বে- যা মানবজাতির জন্য সহনশীল মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।

নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর জোর দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানি, ভবন নির্মাণে প্রাকৃতিক বায়ুপথ ও প্রাকৃতিক আলো ব্যবহার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

পরিবেশ দূষণরোধী অভিযানে সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করে তিনি বলেন, আমি অভিযান চালানোর নির্দেশ দিলে তারা বলে, সারা দেশের জন্য মাত্র ৬ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আছেন।

উপকূলীয় নারীদের লবণাক্ত পানির ক্ষত এবং কৃষকদের আশাহীনতা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, এদের দীর্ঘমেয়াদি পুনর্বাসন পরিকল্পনা প্রয়োজন। ভবিষ্যতে সেনাবাহিনীর কাজ শুধু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নয়, বরং জলবায়ু উদ্বাস্তু ব্যবস্থাপনাও হতে পারে।

তিনি বলেন, এটা শুধু গাছ বাঁচানোর লড়াই নয়, এটা দেশ বাঁচানোর লড়াই। আমরা ব্যর্থ হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এক ভিন্ন বাংলাদেশ পাবে, যা আজকের মানচিত্রে কল্পনাও করা যায় না।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল চৌধুরী মোহাম্মদ আজিজুল হক হাজারী, ডেপুটি-কমান্ড্যান্ট কমোডোর মোস্তাক আহমেদ, চিফ ইন্সট্রাক্টর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাসান প্রমুখ।

আরএএস/কেএসআর/এমএস

Read Entire Article