ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন জাতীয় নির্বাচন থেকে কোনো অংশে কম না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে এস এম ফরহাদের প্রার্থিতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের শুনানিতে সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গণি ও বিচারপতি এস কে তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
এ সময় রিটের বিষয়ে এবং জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদের বিষয়েও আদালত শুনানিতে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলেন। এরপর শেষদিকে ডাকসু নির্বাচন প্রক্রিয়া আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
তখন রিটকারী আইনজীবী জানান, আমরা নির্বাচন স্থগিত চাই না। তখন আদালত বলেন, আপনারা রাজনীতি করে ঝগড়া মারামারি করবেন আর আমাদের এখানে আসবেন আমরা কি করবো। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে ভোটার কীভাবে হয়েছে, প্রক্রিয়া কি, প্রার্থিতা বাতিলসহ সব বিষয়ে তদন্ত হোক। তখন আদালত বলেন, ডাকসু নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে কোনো অংশে কম না। এটা গুরুত্বে দিতে হবে। এরপর আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া স্থগিত ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের দেওয়া ওই আদেশ স্থগিত করে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন চেম্বার জজ আদালত। হাতে লেখা আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে আবেদন শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ আদেশ স্থগিত থাকবে।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি ফারাহ্ মাহবুবের চেম্বার কোর্টে দ্রুত হাতে লিখে আবেদন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সে আবেদনের পর চেম্বার আদালত এ বিষয়ে সিএমপি আবেদন ও শুনানির আগ পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেছেন বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
শিশির মনির বলেন, আগামীকাল চেম্বার আদালতে এ বিষয়ে শুনানি হবে। সে পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত এবং নির্বাচনের কার্যক্রমে কোনো বাধা রইলো না।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১০৪ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯২১ সালে। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম ভোট হয় ১৯২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে। সেই থেকে ১০০ বছরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র ৩৭ বার। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ৫৪ বছরে নির্বাচন হয়েছে সবচেয়ে কম, মাত্র সাতবার।
ডাকসু পরিচালিত হয় এর গঠনতন্ত্র দিয়ে। ১৯৯১ সালের পর ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র তিনবার পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ গত ডিসেম্বরে ডাকসু ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটি করা হয়।
কমিটি ছাত্রসংগঠনসহ বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নিয়ে সুপারিশ জমা দেয়। এরপর গত ১৬ জুন ঢাবির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটে গঠনতন্ত্রের সংশোধনী অনুমোদিত হয়।
সংশোধনীতে মূলত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বয়সসীমা তুলে দেওয়া হয়, যা ২০১৯ সালে ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছিল। এছাড়া তিনটি সম্পাদকীয় পদ যুক্ত করা হয়— মানবাধিকার ও আইন সম্পাদক, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক এবং ক্যারিয়ার বা পেশাজীবন উন্নয়ন সম্পাদক।
এফএইচ/এমএএইচ/