জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়লেন তাকাইচি

2 hours ago 11

জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়লেন সানায়ে তাকাইচি। চীনবিরোধী অবস্থানের জন্য পরিচিত ও সামাজিকভাবে রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ তাকাইচি মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) জোটের সমঝোতায় দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।

গত পাঁচ বছরে জাপানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিচ্ছেন তাকাইচি। তার সামনে এখন নানা চ্যালেঞ্জ, যার মধ্যে অন্যতম আগামী সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্ধারিত সফর।

আরও পড়ুন>>
প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে জাপান
জাপানে জোট সরকার গঠনে দুই দলের সমঝোতা
যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের রপ্তানি কমেছে ১৪ শতাংশ

মঙ্গলবার জাপানের পার্লামেন্টে প্রথম দফার ভোটে অপ্রত্যাশিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে তাকাইচিকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করা হয়। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব নেবেন সম্রাটের সঙ্গে সাক্ষাতের পর।

আগে হেভি মেটাল ব্যান্ডের ড্রামার হিসেবে পরিচিত ৬৪ বছর বয়সী তাকাইচি গত ৪ অক্টোবর ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। দলটি টানা কয়েক দশক ধরে ক্ষমতায় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে জনসমর্থন হারাচ্ছে।

এর ছয় দিন পরই কোয়ালিশন পার্টনার কোমেইতো তাকাইচির রক্ষণশীল অবস্থান ও দলের অর্থ কেলেঙ্কারি ইস্যুতে জোট ছাড়ে। এর ফলে সংস্কারবাদী ডানপন্থি জাপান ইনোভেশন পার্টির (জেআইপি) সঙ্গে নতুন জোট গঠনে বাধ্য হন তাকাইচি। সোমবার সন্ধ্যায় সেই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

জেআইপি খাদ্যের ওপর ভ্যাট শূন্যে নামানো, করপোরেট অনুদান বাতিল এবং সংসদ সদস্য সংখ্যা কমানোর পক্ষে। তাকাইচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জাপানের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী করবেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই একটি দেশ গড়ে তুলবেন।

তার নিজ শহর নারা থেকে ৭৬ বছর বয়সী তোরু তাকাহাশি বলেন, তাকাইচি মজবুত মানসিকতার মানুষ। তিনি ট্রাম্পের মতো নন, তবে ঠিক-ভুল সম্পর্কে খুব স্পষ্ট।

‘নর্ডিক দেশগুলোর’ মতো নারী নেতৃত্বসমৃদ্ধ একটি মন্ত্রিসভা গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তাকাইচি, যেখানে বর্তমানে দেশটিতে নারী মন্ত্রী মাত্র দুইজন। স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, নতুন মন্ত্রিসভায় ডানপন্থি সাতসুকি কাতায়ামা অর্থমন্ত্রী ও অর্ধেক আমেরিকান বংশোদ্ভূত কিমি ওনোদা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা মন্ত্রী হতে পারেন।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২৫ সালের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট-এ জাপান ১৪৮ দেশের মধ্যে ১১৮তম। সংসদের নিম্নকক্ষে নারীর অংশ মাত্র ১৫ শতাংশ, করপোরেট বোর্ডরুমেও পুরুষ আধিপত্য বিরাজমান।

তাকাইচি প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, তিনি নারীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সমস্যাগুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে চান। নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে তিনি মেনোপজ বা ঋতু বন্ধ হওয়া নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন। তবে তিনি দাম্পত্য আইন পরিবর্তনের বিপক্ষে, যেখানে স্বামী-স্ত্রীকে একই পদবি বহন বাধ্যতামূলক এবং রাজপরিবারে নারী উত্তরাধিকার নিষিদ্ধ রাখার পক্ষে।

নারা-র এক কর্মজীবী নারী কেইকো ইয়োশিদা বলেন, আমি চাই তিনি নারীদের জন্য বসবাসযোগ্য একটি জাপান গড়ে তুলুন।

১৮ বছর বয়সী ছাত্রী নিনা তেরাও বলেন, যদি শিশুসেবা ও সন্তান জন্মের পর নারীদের কর্মক্ষেত্রে ফেরার মতো নীতি হয়, সেটাই বড় পরিবর্তন হবে।

এদিকে ওয়াশিংটন ও টোকিওর মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিস্তারিত এখনো নির্ধারিত হয়নি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জাপানের কাছে রুশ জ্বালানি আমদানি বন্ধ ও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

নারার আরেক প্রবীণ বাসিন্দা সাতোশি সাকামতো বলেন, আমি চাই তিনি এমন প্রধানমন্ত্রী হোন, যিনি প্রয়োজন হলে ‘না’ বলতে পারেন।

সূত্র: এএফপি
কেএএ/

Read Entire Article