বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, জামায়াতে ইসলামী দেশবাসীর সেবা করা সুযোগ পেলে এ দেশে চাঁদাবাজি ও দখলদারের অস্তিত্ব থাকবে না। ঘুষ থাকবে না। আমরা ফ্যাসিবাদ, সাম্রজ্যবাদের প্রশ্রয় দেবে না- এমন জাতি গড়তে চাই।
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে যশোর ঈদগাহ ময়দানে জেলা জামায়াতের বিশাল কর্মিভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চাঁদাবাজ ও দুঃশাসনমুক্ত, বৈষম্যহীন দেশ গড়তে জনগণ জামায়াতের দিকে তাকিয়ে আছে। ক্ষমতা নয়, সুশাসনের জন্য দেশবাসীর ভালোবাসা ও সমর্থন চাই। আমরা ন্যায় ও ইনসাফের বাংলাদেশ গড়তে চাই।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। জামায়াত এমন শিক্ষা চায় যেখানে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষ করে শুধু সার্টিফিকেট নয়, একটা চাকরি নিয়ে বের হবে।
জামায়াত আমির বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে আর কত চেতনা বিক্রি করবেন আপনারা। ৫৩ বছর জাতিকে দাসে পরিণত করেছেন। আমরা আর কারও দাসে পরিণত হবো না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ১৬ ডিসেম্বরের বক্তব্যের সমালোচনা করেন জামায়াত আমির।
তিনি বলেন, ৫ আগস্টের আগে দেশ দুঃশাসনে পরিপূর্ণ ছিল। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখন থেকে দুঃশাসন-জুলুম করেছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন, জুলুমের কষ্ট বেশি ছিল। বাংলাদেশ ও বিশ্বের মানুষ কল্পনা করতে পারেনি ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট রেজিমের পতন হবে। ফ্যাসিস্ট পতনের এই অর্জনের নেতৃত্ব আমাদের সন্তানদের। তাদের কোটা আন্দোলন কমাতে ফ্যাসিস্ট সরকার হাতুড়ি, হেলমেট বাহিনী গুলি চালিয়ে আন্দোলন দমাতে চেয়েছিল। আমাদের বীর সন্তানরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। তাদের এই গৌরব, অভিভাবক হিসেবে আমাদেরও।
তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ আমলের প্রাচীন জেলা যশোর। পুরাতন জেলা হিসেবে যশোরে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। যশোরবাসী ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এই শহরকে কেন্দ্র করে প্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। পার্ক নেই, মাঠ নেই, জলাধার নেই। উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পা ছুঁয়ে নেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা ভুলে যায়। ভাবে পাঁচ বছর পর আবার পা ছুঁয়ে নিলে হয়ে যাবে। মাঝখানে তারা মানুষকে মনে রাখে না।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে জামায়াত আমির বলেন, আমরা যাদের চোর, ডাকাত হিসেবে চিনি, তাদের সক্ষমতা কতটুকু? কিন্তু কলমের খোঁচায় যারা যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ডাকাতি করেছে, তারা বড় চোর-ডাকাত। আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা ডাকাতি করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের পুঁজি দিতে পারছে না। অন্তর্বর্তী সরকার অর্থনীতিকে সচল করার চেষ্টা করছে। আমরা চাই অর্থনীতি আরও গতিশীল হোক। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও উদ্যোগী হোক।
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে। আরেক দল আসুক, আমরা চাই না। দেশে কি চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে? হাতবদল হয়েছে। এ জন্য তো এত মানুষ শহীদ হননি। আমরা যেন শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি না করি। এসব ঘৃণিত কাজ করলে শহীদদের সঙ্গে বেইমানি হবে। আপনারা এই ঘৃণিত কাজ করবেন না। ফুটপাত, হাটঘাট, বালুমহাল, জলমহাল দখল, চাঁদাবাজিতে কোনো নেতাকর্মী পা দিবেন না।
মিথ্যা মামলায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় নিরীহ, নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। হত্যা মামলায় ৪০০-৫০০ মানুষকে আসামি করা হচ্ছে। একজন মানুষ হত্যায় এত লোক কীভাবে জড়িত থাকে? মামলা করে অর্থবাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে আসামি করুন, বিচার নিশ্চিত হবে।
দেশের সব মানুষের সমান অধিকার উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, দেশে সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বলে কিছু নেই। সবাই সাংবিধানিকভাবে সমান। ধর্ম-বর্ণ মিলেমিশে আমরা বসবাস করি। কেউ যদি আপনাদের সংখ্যালঘু বলে, চিৎকার করে বলবেন, আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক, সবার অধিকার সমান।
তিনি বলেন, এ দেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলাম। এখনো বলছি তদন্ত করুন। দোষী প্রমাণিত হলে নিজের বিচার দাবি করছি।
যশোর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য দেন-জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, মাওলানা আজিজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আমির অধ্যাপক আলী আযম, সাতক্ষীরা জেলা আমির শহিদুল ইসলাম মুকুল, মাগুরা জেলা আমির এমবি বাকের, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, শহীদ আবদুল্লাহর বাবা আবদুল জব্বার, যশোর জেলা নায়েবে আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, যশোর পূর্ব জেলার সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা আবদুল আজিজ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আবদুল মান্নান, যশোর জেলা কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাড. গাজী এনামুল হক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুল কাদের প্রমুখ।