জাল টাকা : অর্থনীতির এক ‘নীরব ঘাতক’

5 hours ago 3

টাকা শুধু বিনিময়ের একটি মাধ্যম নয়, এটি একটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও অর্থনীতির ভিত্তিমূল। কিন্তু যখন এই ভিত্তিমূলে আঘাত হানে ‘জাল টাকা’ নামক বিষফোঁড়া, তখন পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোতেই অস্থিরতা তৈরি হয়। জাল টাকা হলো প্রতারণার এক ভয়াল রূপ, যা সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ভেতর থেকে দুর্বল করে দেয়। সম্প্রতি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর অভিযানে কোটি কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার এবং বেশ কয়েকটি চক্রের গ্রেফতারের ঘটনা প্রমাণ করে, এ সমস্যাটি এখনো আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

জাল টাকা মূলত অর্থনীতির জন্য এক ‘নীরব ঘাতক’। যখন বাজারে জালনোটের সরবরাহ বাড়ে, তখন টাকার প্রকৃত মূল্য কমে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এছাড়া জালনোটের বিস্তারের ফলে মানুষ নগদ লেনদেনে আস্থা হারায়, যা স্বাভাবিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত করে।

আগে জাল টাকা তৈরি হতো নিম্নমানের কাগজে, যা সহজেই চেনা যেত। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির অপব্যবহারে এখন এতটাই নিখুঁতভাবে জালনোট তৈরি হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে খালি চোখে তা শনাক্ত করা প্রায়শই কঠিন হয়ে পড়ে। পেশাদার চক্রগুলো আসল নোটের নিরাপত্তা সুতা, জলছাপ এবং প্রিন্টের সূক্ষ্ম বিষয়গুলো নকল করার চেষ্টা করে। অনলাইনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই জাল নোট বিক্রির সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে, যা সমস্যার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এই জালিয়াত চক্র বর্তমানে ব্যাপকহারে তাদের জাল বিস্তার করেছে। অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তারা টাকা জাল করে বাজারে ছাড়ছে। বিশেষ করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জালিয়াত চক্র আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কেননা এই সময় অর্থপ্রবাহ বেড়ে যায়।

জাল টাকা মূলত অর্থনীতির জন্য এক ‘নীরব ঘাতক’। যখন বাজারে জালনোটের সরবরাহ বাড়ে, তখন টাকার প্রকৃত মূল্য কমে যায়। ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। এছাড়াও জালনোটের বিস্তারের ফলে মানুষ নগদ লেনদেনে আস্থা হারায়, যা স্বাভাবিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। জাল টাকা বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

জাল টাকা হলো একটি রাষ্ট্র বা সরকারের আইনি অনুমোদন ছাড়াই উৎপাদিত মুদ্রা, যা আসল মুদ্রার অনুকরণে তৈরি করা হয় এবং এর প্রাপককে প্রতারিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। জাল টাকা অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় এবং দ্রব্যমূল্যের মূল্যবৃদ্ধিসহ নানান ধরনের ক্ষতি ডেকে আনে।

জালিয়াত চক্রের অনেককে পাকড়াও করা হলেও তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আইনের ফাঁক থাকায় এই ঘৃণ্য অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আর এভাবেই জালিয়াত চক্র সহজেই বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়।

জালিয়াত চক্রকে যে এখনো সক্রিয় তার প্রমাণ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে। সাম্প্রতিকসময়ে বাংলাদেশে জাল টাকা তৈরি ও লেনদেনের অভিযোগে বেশ কয়েকটি চক্রকে আটক করেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে-

• চট্টগ্রামে ২০ কোটি টাকার জাল নোট উদ্ধার: গত ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে র্যাব চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকা থেকে দেশি-বিদেশি আনুমানিক ২০ কোটি টাকা সমমূল্যের বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রাসহ চক্রের দুই সদস্যকে (তানজিব উদ্দিন ও আসিফ উদ্দিন) গ্রেফতার করে। এই জাল নোটগুলো অনলাইনে বিক্রি করা হতো বলে জানা যায় এবং এতে বাংলাদেশি ১০০০, ২০০ ও ৫০ টাকার পাশাপাশি ইউএস ডলার, ইউরো, রিয়াল ও দিরহামের জাল মুদ্রা ছিল।
• রংপুরে জাল টাকা ব্যবহারকারী গ্রেফতার: গত ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে রংপুরে ওষুধ কেনার সময় জাল টাকা ব্যবহারের অভিযোগে এক ব্যক্তিকে (মো. নজরুল ইসলাম) পুলিশ গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে আরও কয়েকটি ১০০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার করা হয়েছিল।
• ঢাকায় জাল নোট তৈরি কারখানা ও ছয়জন আটক: গত ১৫ মে, ২০২৫ তারিখে ঢাকা ও পঞ্চগড়ে অভিযান চালিয়ে একটি জাল নোট তৈরি কারখানার সন্ধান পায় ডিবি পুলিশ এবং এই চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে। তাদের কাছ থেকে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামসহ বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা জব্দ করা হয়েছিল।
• শেরপুর প্রধান ডাকঘরে জাল নোট শনাক্ত: গত ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে শেরপুর প্রধান ডাকঘরে এক নারী সঞ্চয়পত্রের টাকা জমা দিতে এলে মেশিনে ১০০০ টাকার ৫৩টি জাল নোট ধরা পড়ে।

এ ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, জালিয়াত চক্র এখনো কতটা সক্রিয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু এরপরও তাদের অপতৎপরতা বন্ধ কনা যাচ্ছে না।

জাল টাকা চেনার উপায়-

আসল টাকা চেনার জন্য কিছু নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য রাখা জরুরি:
• জলছাপ: আসল নোটে আলোর বিপরীতে তাকালে বাঘের মাথা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রামের স্পষ্ট জলছাপ দেখা যায়, যা নকল নোটে সাধারণত অস্পষ্ট বা নিম্নমানের হয়।
• নিরাপত্তা সুতা: সব মূল্যমানের (১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ টাকা) নোটে একটি নিরাপত্তা সুতা থাকে। ১০০, ২০০ ও ৫০০ টাকার নোটে এটি ৪ মিমি চওড়া এবং ১০০০ টাকার নোটে ৫ মিমি চওড়া হয়। এই সুতা নাড়াচাড়া করলে এর রং (যেমন ১০০০ টাকার ক্ষেত্রে সোনালি থেকে সবুজ) পরিবর্তিত হয় এবং এর মধ্যে নোটের মূল্যমান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো খচিত থাকে। জাল নোটে এই বৈশিষ্ট্যগুলো অনুপস্থিত থাকে বা নিম্নমানের হয়।
• অসমতল ছাপা: আসল টাকা বিশেষ নিরাপত্তামূলক কালিতে ছাপা হয়, যা হাত দিয়ে স্পর্শ করলে খসখসে বা উঁচু-নিচু অনুভূত হয়। নকল নোটে সাধারণত এ অসমতল ভাব থাকে না।
• আল্ট্রা ভায়োলেট (UV) লাইট: UV লাইটের নিচে ধরলে আসল নোটের নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় রেডিয়ামের প্রলেপ জ্বলজ্বল করে ওঠে, যা জাল নোটে হয় না।

নোটের কাগজ: আসল নোটের কাগজ টেকসই হয় এবং মুষ্টিবদ্ধ করে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে তা সাধারণ কাগজের মতো ভাঁজ হয়ে যায় না। জাল নোট সহজেই ভাঁজ হয়ে যায় বা পানিতে ভেজালে দ্রুত নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশে জাল টাকার মামলার সংখ্যা প্রতি বছর পরিবর্তিত হয় এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনেক মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী:
• অনিষ্পন্ন মামলা: ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন থানায় জাল নোট-সংক্রান্ত প্রায় ৬,৮২৬টি মামলা অনিষ্পন্ন অবস্থায় ছিল।
• নতুন মামলার সংখ্যা (নির্দিষ্ট বছরে):
• ২০২২ সালে সারাদেশে জাল নোট বিষয়ে ১৩২টি নতুন মামলা করা হয়েছিল।
• ২০২১ সালের প্রথম দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ১৮টি নতুন মামলা হয়েছিল।
• ২০১৫ সালে মামলার সংখ্যা ছিল ৪৩৯টি, যা পরবর্তী বছরগুলোতে কমেছে।

মামলা নিষ্পত্তির হার কম হওয়ায় আদালতগুলোতে মামলার জট লেগে থাকে এবং দুর্বল আইনের কারণে অনেক আসামি জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে জাল মুদ্রা প্রতিরোধে একটি নতুন ও কঠোর আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।

বাংলাদেশে জাল টাকা তৈরি, বহন, বিপণন বা লেনদেন করা একটি গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। খসড়া ‘জাল মুদ্রা প্রতিরোধ আইন’-এ এই অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এর মাধ্যমে অর্জিত সম্পত্তির দ্বিগুণ বা এক কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংককে নিয়মিত বিরতিতে ব্যাংক নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো আধুনিক এবং উন্নত করতে হবে, যাতে জালিয়াতদের পক্ষে তা নকল করা কঠিন হয়। পুলিশ, র্যাব এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জাল টাকা তৈরি ও বিতরণের সাথে জড়িত চক্রগুলোকে চিহ্নিত করে কঠোর হাতে দমন করতে হবে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাল টাকা শনাক্তকরণে ব্যবহৃত আধুনিক মেশিন (FND machine) ও প্রযুক্তি সরবরাহ এবং এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু জালিয়াত চক্র প্রায়শই আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করে, তাই অন্যান্য দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সাথে তথ্য আদান-প্রদান এবং সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি ‘জাল মুদ্রা প্রতিরোধ সেল’ গঠন করা যেতে পারে, যেখানে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা সমন্বিতভাবে কাজ করবে। নিজে আসল টাকা চেনার উপায়গুলো ভালোভাবে জানতে হবে এবং পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধব ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এ সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য রয়েছে।

প্রতিটি নোট হাতে পাওয়ার সময় জলছাপ, নিরাপত্তা সুতা, অসমতল ছাপ (intaglio print) এবং রং পরিবর্তনশীল কালির মতো নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলো মনোযোগ দিয়ে যাচাই করতে হবে।

সম্ভব হলে নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি, যেমন- মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড বা অনলাইন ব্যাংকিং ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এতে বড় অঙ্কের লেনদেনে ঝুঁকি কমে যায়।

বড় অঙ্কের যে কোনো আর্থিক লেনদেন অবশ্যই আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত।

যদি কোনো সন্দেহজনক নোট পাওয়া যায়, তবে তা নিজের কাছে না রেখে অবিলম্বে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন বা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানাতে হবে। এ ধরনের নোট অন্য কারও কাছে চালানো একটি অপরাধ।

জাল নোটের অবারিত বিস্তারে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। ফলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে দেশের কাগুজে মুদ্রার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ভাবতে হবে। জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে।

জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব সুপারিশ আকারে পাঠানো হয়। তাতে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জাম বা বড় চালানসহ গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলাকে ‘জামিন অযোগ্য’ হিসেবে বিবেচনা করার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়। এছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে এসব মামলার বিচার এবং জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রতিটি নাগরিকের আসল টাকা চেনার মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী জলছাপ, নিরাপত্তা সুতা এবং খসখসে ছাপের মতো বিষয়গুলো যাচাই করে লেনদেন করা আবশ্যক।

ব্যাংকগুলোতে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং এই মেশিনগুলোর সক্ষমতা নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে।

নগদ টাকার পরিবর্তে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের (মোবাইল ব্যাংকিং, কার্ড পেমেন্ট) ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে জাল টাকার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। বড় অঙ্কের লেনদেন সব সময়ই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে করা উচিত।

জাল টাকা তৈরি, সংরক্ষণ ও বিতরণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান কঠোর আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে অন্যরা এমন অপরাধে জড়াতে ভয় পায়।

কোনো সন্দেহজনক নোট পেলে বা জাল টাকা তৈরি চক্রের সন্ধান পেলে তা গোপন না রেখে তাৎক্ষণিকভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানো নাগরিক দায়িত্ব।

পরিস্থিতি সামাল দিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিংয়ের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থায় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে মেশিনে আসল নকল বোঝার সুযোগ নেই। এই মেশিন ছাড়াও কি দেখে নকল টাকা চেনা যাবে সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। নকল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এজন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন সাজার বিধানও রয়েছে। যারা ধরা পড়েছে তাদের অপরাধ অনুযারী সাজার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে জাল টাকার বিস্তার রোধ করা সম্ভব।

এ সমস্যার সমাধান কেবল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একার পক্ষে সম্ভব নয়। এটি একটি সম্মিলিত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চ্যালেঞ্জ। জাল টাকা প্রতিরোধে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি জনসচেতনতা এবং সতর্কতা অপরিহার্য। আসুন, সবাই মিলে সতর্ক থাকি এবং এই নীরব ঘাতককে রুখে দিয়ে নিজেদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখি।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট। ডেপুটি এডিটর জাগো নিউজ।
[email protected]

এইচআর/এমএফএ/এএসএম

Read Entire Article