‘জুলাই বিপ্লবের অর্জন নস্যাতের ষড়যন্ত্র চলছে’

17 hours ago 8

অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, জুলাই বিপ্লবে শহীদরা ইতিহাসের মহানায়ক হয়ে থাকবেন। এই বিপ্লব হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে। এ বিপ্লবের অর্জন ধ্বংসের চেষ্টা চলছে। কোনো ষড়যন্ত্রকারী এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে পারবে না। বিপ্লবীরা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

আসাদুজ্জামান বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হয়েছিল ইতোমধ্যে সেগুলোর নিষ্পত্তি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণে আইনগত বাধা নেই। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ মূখ্য নয়। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে দণ্ডিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই নির্বাচনে অযোগ্য হবেন। শেখ হাসিনার নির্মম পরিণামের পরে তার পাশে দলের কেউ দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছে না। 

তিনি বলেন, যারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধংস করেছিল, সংবিধান কেটে ছিঁড়ে মানুষের অধিকারকে ভূলন্ঠিত করেছে তারা ইতিহাসের খলনায়ক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে তারা বিচারের মাধ্যমে কারাগারে যাবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছিল। ১৯৭৩ সালে কুমিল্লা থেকে হেলিকপ্টারে ব্যালটবক্স ছিনতাই করে ঢাকায় এনে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করার ধারাবাহিকতায় বিগত ৩টি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। এসব নির্বাচনকে যারা কলঙ্কিত করেছিল তাদের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারকে চিরদিন ক্ষমতায় রাখার অসৎ উদ্দেশে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রায় জালিয়াতির দায়ে খায়রুল হকের গ্রেপ্তার ও বিচার সময়ের দাবি। এ দেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল পতিত আওয়ামী সরকার। আমি-ডামি, একতরফা ও মধ্যরাতের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। 

তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই জাল জালিয়াতির অপরাধে অপরাধী ছিল। যারা এসব নির্বাচনী অপরাধ করেছে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। শপথ ভঙ্গ করে যেসব নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচার কী প্রক্রিয়ায় হবে তা নিয়ে সরকারকে গুরুত্ব সহকারে চিন্তাভাবনা করা উচিত। কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের আমলে আরপিওতে সংশোধনী এনে ভোট বন্ধে ইসির ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছিল। এই ক্ষমতা পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হবে। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিরুদ্ধে জাতীয় নির্বাচনে গুরুতর অসাদাচরণ এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে সেই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ভবিষ্যৎ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন। 

দফাগুলো হলো- 

১. বিগত নির্বাচনকে যারা বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সেই নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনী অপরাধে যুক্ত সকলকে বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেওয়া। 
২. সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অসাদাচরণ ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করা। 
৩.শুধুমাত্র ভোটের দিন নয়, আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে যাতে তপশিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ না থাকলে ইসিকে যে কোনো সময় ভোট বন্ধ কারার এখতিয়ার ফিরিয়ে আনা। 
৪. নির্বাচনকালীন সন্ত্রাস, ভীতি সঞ্চার বা অন্য কোনো ধরনের নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া। 
৫. দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুটেরাসহ ঋণ খেলাপিরা কোনোভাবেই যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য কঠিন আইনের বিধান রাখা। 
৬. আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া। 
৭. যেসব আইনের কারণে নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনে বাধার সম্মুখীন হতে পারে সেই সব আইন বাতিল করা। 
৮. সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নবগঠিত নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলগুলোসহ নাগরিক সংগঠনের সঙ্গে এজেন্ডা ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা। 
৯. অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের স্বার্থে দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান মনোনয়ন বাণিজ্য বন্ধের উপায় বের করা। 
১০. নির্বাচন কমিশনকে সকল মতভেদের ঊর্ধ্বে থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকা এবং কোনো চাপের নিকট মাথা নত না করা।

‘অতীতের নির্বাচনী অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হলে ভবিষ্যৎ নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করা যাবে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক একরামুল হক সায়েম, সাংবাদিক সাইদুর রহমান ও সাংবাদিক মনিরুজ্জামান মিশন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

Read Entire Article