জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধর

5 hours ago 3

রংপুরে সংবাদ প্রকাশের জেরে লিয়াকত আলী বাদল নামে এক সিনিয়র সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধর ও জোর করে ক্ষমা চাওয়ানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জুলাই যোদ্ধা পরিচয় দেওয়া কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেফতার ও রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ করেন সাংবাদিকরা।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল দৈনিক সংবাদ, একুশে টেলিভিশন ও বাংলা ট্রিবিউনে কাজ করেন।

জানা যায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক সংবাদে ‘রংপুরে জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটো রিকশার লাইসেন্স, ৫ কোটি টাকার বাণিজ্যের পায়ঁতারা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর জেরে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নগরীর কোর্ট মসজিদ এলাকা থেকে সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে রকি নামে এক যুবকের নেতৃত্বে ৭-৮ জন জুলাই যোদ্ধা পরিচয়ে অটোরিকশায় করে সিটি করপোরেশনের প্রধান ফটকে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে টেনেহিঁচড়ে নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রধান নির্বাহীর রুমের সামনে নিয়ে যান। সেখানে তাকে নিউজের জন্য প্রধান নির্বাহীর কাছে ক্ষমা চাইতে বলেন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। তখন প্রধান নির্বাহী তার কক্ষে উপস্থিত ছিলেন না।

পরে খবর পেয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে ছুটে গিয়ে বাদলকে উদ্ধার করে নিয়ে আসার সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চড়াও হন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে সাংবাদিকরা সিটি করপোরেশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

লিয়াকত আলী বাদল বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনারের (রসিক) নির্দেশে রকি ও তার লোকজন আমাকে কাচারি বাজার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করে। পরে সিটি করপোরেশনে নিয়ে গিয়ে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার চেম্বারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে ও জোর করে ক্ষমা চাইতে বলে। আমি কোনো অন্যায় করিনি, তাই ক্ষমা চাইনি। আমি ন্যায়বিচার চাই।

অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে রিপোর্টার্স ক্লাব রংপুরের সভাপতি শাহ্ বায়েজিদ আহমেদ বলেন, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করবে এটাই গণতন্ত্রের মূলনীতি। সংবাদ প্রকাশের কারণে একজন সাংবাদিককে তুলে নিয়ে মারধর করা নজিরবিহীন ও চরম উদ্বেগজনক। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের গ্রেফতার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমার প্রত্যাহার চাই।

সিটি প্রেসক্লাব রংপুর’র সভাপতি স্বপন চৌধুরী বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে সিনিয়র সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদলকে মারধর, লাঞ্ছিত ও মব সৃষ্টির ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেবে না সাংবাদিক সমাজ। রংপুরে চাকরি করবেন, দুর্নীতি করবেন আর আপনাদের অপকর্মের কথা লিখলেই সাংবাদিকদের হেনস্তা করবেন, সেই দিন ভুলে যান। ন্যাক্কারজনক এই ঘটনায় নেপথ্যের ইন্ধনদাতাসহ জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি করছি।

রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাটি শুনেছি। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এরইমধ্যে একজনের নাম জানতে পেরেছি।

এ বিষয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতিমা সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা ভিত্তিহীন। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। যদি কেউ সিঙ্গেল প্রমাণ করতে পারেন, তাহলে আইন অনুযায়ী যা ব্যবস্থা নেওয়া হবে তা মেনে নেব।

এদিকে এ ঘটনায় আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন সাংবাদিক নেতারা।

জিতু কবীর/এমএন/জেআইএম

Read Entire Article