জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তৃতীয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সভা সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ও সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম।
সভায় ফাউন্ডেশনের সংশোধিত গঠনতন্ত্রের অনুমোদন, নির্বাহী পরিষদ গঠন ও আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন দেওয়া হয়।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০৭ কোটি ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ২৪০ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৫ জন শহীদ পরিবারকে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা ও ৭৭৫ জন আহতদের ৭ কোটি ৮৬ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা অর্থাৎ মোট ১১৪০ জনকে ২৬ কোটি ১১ লাখ ৭০ হাজার ১৯০ টাকা দেওয়া হয়েছে।
ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অব. বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. জালাল উদ্দীনকে চেয়ারম্যান করে মেডিকেল সাপোর্ট টিম গঠন করা হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে করণীয় সংক্রান্ত একটি বিশেষ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছেন।
আরও পড়ুন
- অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনা
- ঋণ পরিশোধে ৪৭৫ কোটি টাকা প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মধ্যে নয়জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনকে থাইল্যান্ডে ও ৩ জনকে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই আরও দুজন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলে জানান তিনি। এছাড়া আহত আরও ৭ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলমান।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আহতদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে কয়েকটি স্পেশাল মেডিকেল টিম এসেছে। এর মধ্যে নেপাল থেকে ৩ জন, যুক্তরাজ্য থেকে ২ জন, ফ্রান্স থেকে ১ জন, থাইল্যান্ড থেকে ৬ জন ও চীন থেকে ১০ জন বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশে এসে বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো পরিদর্শন, অস্ত্রোপচার ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা আহতদের সুচিকিৎসার প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে দূতাবাসগুলোর কাছে সহযোগিতা চাওয়ার পরামর্শ দেন।
অতিদ্রুত আহতদের বিস্তারিত মেডিকেল হিস্ট্রির রিপোর্ট তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।
বৈঠকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুর রহমান সৈকতের বোন সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি, শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ, শহীদ তাহির জামান প্রিয়’র মা শামসী আরা জামানসহ শহীদ পরিবারের ১৪ জন সদস্য অংশ দেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নির্মমভাবে গুলিতে নিহত সন্তানের মরদেহ উদ্ধার থেকে দাফন পর্যন্ত দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
এসময় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আপনারা কিছু সময়ের জন্য আমাকে আপনাদের অনুভূতি জানিয়েছেন। সন্তান ও ভাই-বোন হারানোর যে দুর্বিষহ যন্ত্রণা এটি মহাকাব্য। এ অল্প সময় এটি প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার নেই। যারা শহীদ হয়েছে তারা একেকটি পরিবার থেকে এসেছে। আপনারা, আপনাদের পরিবার এমন একেকজন মানুষ তৈরি করেছে যারা এতখানি দুঃসাহস নিয়ে অধিকারের কথা বলেছে। আমি শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই এবং একই সঙ্গে আপনাদেরও, শহীদদের পরিবারের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই।
সভায় নির্বাহী পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. সারজিস আলম, অর্থ সম্পাদক হিসেবে মোহা. আহসান হাবীব চৌধুরী এবং নির্বাহী সদস্য হিসেবে অ্যাডভোকেট মোহা. মুজাহিদুল ইসলাম, সাবরিনা আফরোজ সেবন্তি ও ডা. তাসনিম জারাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া লিগ্যাল সাপোর্ট টিম এবং ছয় সদস্যের গভর্নিং বডি গঠন করা হয়েছে।
এমইউ/এমএইচআর/এমএস