জুলাই হত্যার দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে

2 hours ago 3

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, একটি শ্রেণি আওয়ামী লীগ ধাঁচে নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখছে। বাংলাদেশের মাটিতে আওয়ামী ধাঁচের কোনো নির্বাচন জনগণ আর হতে দেবে না। জুলাই হত্যাকাণ্ডের দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে।

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাদ আসর চট্টগ্রাম মহানগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের উত্তর গেটে জামায়াত আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রফিকুল এসব কথা বলেন।

জুলাই সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ পাঁচ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে জামায়াতের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অংশ হিসেবে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে নিউমার্কেট মোড়ে গিয়ে আবারও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

জামায়াতের পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচনে সংসদের উভয়কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু, অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা, ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম ও গণহত্যা, দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সমাবেশে রফিকুল বলেন, আমরা যে দাবির জন্য রাজপথে নেমেছি, এসব দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. ইউনূস জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ফ্যাসিবাদী ও তাদের দোসরদের দৃশ্যমান বিচার এবং পাচারকৃত টাকা ফেরত ও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করবেন।

জামায়াত নেতা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যে ড. ইউনূসের আশপাশের অনেকে একটি দলের পকেটে ঢুকে গেছে। সরকারের ভেতরে থেকে অনেকে সরকার ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। এটি মেনে নেবে না জনগণ। ফ্যাসিবাদের মতোই জনগণ তাদের প্রতিরোধ করবে। সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল, তা হয়নি। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করতেই হবে। প্রতিবন্ধকতা তৈরিকারীদের চিহ্নিত করা হবে। নির্বাচনের জন্য এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি। দেশে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি।

জামায়াত রাজপথে কেন নেমেছে তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করছেন জানিয়ে রফিকুল বলেন, রাজপথের আন্দোলন ও লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়েছে জনগণ। কাজেই রাজপথে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লবের যে আকাঙ্ক্ষা সেটা আমরা বাস্তাবায়ন করবো।

পিআর নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে গণভোটের দাবি জানিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ নিচ্ছি, গণভোট দিন। জনগণ পিআরের পক্ষে আছে না কি বিপক্ষে আছে। জনগণ যদি পিআর মানে অন্তর্বর্তী সরকারকেও মানতে হবে। আর জনগণ যদি বিপক্ষে যায় আমরা তা মেনে নেব।

জামায়াত নেতা দাবি করেন, ফ্যাসিবাদের দোসরদের রাজনীতি অকার্যকর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধীদের দৃশ্যমান বিচার করতে হবে।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর ভারপ্রাপ্ত আমির মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরীর সেক্রেটারি মুহাম্মদ নুরুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শাহজাহান বলেন, গোটা জাতি উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে আছে। কেউ কেউ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন যে জামায়াত না কি নির্বাচন পেছাতে চায়। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, জামায়াত সবার আগেই ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো নির্বাচনী কার্যক্রম চোখে পড়ে না। যারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিদান ও প্রয়োজনীয় সংস্কার বাধাগ্রস্ত এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচনের বিরোধিতা করছে নিজেদের ভরাডুবি জেনে, তারাই মূলত ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে দিতে চায়।

জুলাই হত্যার দৃশ্যমান বিচার শেষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন দিতে হবে

সভাপতির বক্তব্যে নজরুল বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল আয়ুব খান ও ইয়াহিয়া খানের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে। সত্তরের নির্বাচনের ম্যান্ডেট মেনে না নেওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। তবে মুক্তিযুদ্ধের নামে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের স্পষ্ট অবমাননা। দুই হাজার শাহাদাত, অসংখ্য পঙ্গুত্ব ও নির্যাতনের পর ৩৬ জুলাই বিপ্লব এসেছে এবং দীর্ঘ দেড় দশকের ফ্যাসিবাদী শাসন শেষ হয়েছে। পুনরায় ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার যেকোনো চেষ্টা রোধ করতে হবে। জাতীয় পার্টিসহ ফ্যাসিবাদী দোসরদের কার্যক্রম অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, আধিপত্যবাদকে ভাড়া দিয়ে যারা রাজনীতি বা বুদ্ধিজীবীতা করছেন, তাদেরও বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করবে। অস্থায়ী সাংবিধানিক আদেশে জুলাই সনদের আইনি মর্যাদা ও ঘোষণাপত্রের গ্যাজেট প্রকাশ করতে হবে। প্রচলিত ভোটিং ব্যবস্থায় একদলীয় শত ভাগ ক্ষমতা চর্চার পথ বন্ধ করতে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি। এতে ছোট-বড় সব রাজনৈতিক দলের অংশীদারিত্ব ও ভোটারের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।

জামায়াত নেতা বলেন, অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার করলেই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হবে। লুটেরা, টাকা পাচারকারী ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচার এবং সব দলের সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করেই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।

মহানগরীর সেক্রেটারি নুরুল বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি না হলে সংস্কারের কোনো ভিত্তি নেই। কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণ রাজপথ থাকবে, ঘরে ফিরবে না।

সমাবেশ ও গণমিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারি মোহাম্মদ উল্লাহ ও ফয়সাল মুহাম্মদ ইউনুস, সহকারী সেক্রেটারি মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান হেলালী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি এস এম লুৎফর রহমান, কর্মপরিষদ সদস্য হামেদ হাসান ইলাহী, আমির হোসাইন, ফখরে জাহান সিরাজী সবুজ, মাহমুদুল আলম প্রমুখ।

এমআরএএইচ/একিউএফ/এমএস

Read Entire Article