ঝালকাঠির প্রত্যেক গ্রামে সুপারি চাষ হয়। প্রতি বছরের তুলনায় এ বছর সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। তবে দামে মন্দা হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন চাষিরা। তবুও জেলার প্রতিটি হাটেই সুপারি বেচাকেনার জন্য ভিন্ন স্থান থাকে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত থাকে হাটগুলো।
জানা যায়, জেলার ৪টি উপজেলার ৩২টি ইউনিয়নের ৪৭১টি গ্রামে প্রতি বছর কয়েক কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সুপারির ভালো ফলন হয়েছে। প্রতি কুড়ি বা ২১০টি সুপারি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা। ফলন ভালো হলেও দাম কম হওয়ায় আশাহত চাষিরা।
ঝালকাঠির ছত্রকান্দা, সিঅ্যান্ডবি বাজার, রাজাপুরের বাগড়ি, লেবুবুনিয়া, বাদুরতলা, নাপিতেরহাট, নলছিটির ভৈরবপাশা, ষাটপাকিয়া, চাকলার বাজার, মানপাশা, মোল্লারহাট, কাঠালিয়ার কৈখালী, সাতানি বাজার, আমুয়াসহ জেলার বিভিন্ন হাটে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকার সুপারি বেচাকেনা হয়। এখানকার সুপারি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেন চাষিরা। পাইকাররা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন।
চাষিরা বলছেন, অন্য ফসলের তুলনায় সুপারি চাষে ঝুঁকি ও উৎপাদন খরচ কম। রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ কম থাকায় সুপারি চাষে আগ্রহও বাড়ছে দিন দিন। ক্রেতারা জানান, এ বছর সুপারির উৎপাদন বেশি হওয়ায় কম দামে সুপারি কিনতে পারছি। পাশাপাশি ভালো লাভের আশা করছি।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন হয়েছে ভালো। বাজারদর স্থিতিশীল থাকলে চাষিরা আরও লাভবান হবেন। ঝালকাঠি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে চেষ্টা করছি সুপারির সুপরিকল্পিত চাষাবাদ করার। আমাদের অর্থনীতিতে যেন আরও অবদান রাখতে পারে; সেভাবে চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।’
তিনি বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাত সুপারি চাষের অনুকূল হওয়ায় এ অঞ্চলে ফলন অনেক ভালো হয়েছে, যা দেখে এলাকার মানুষ সুপারি চাষে আরও উৎসাহী হচ্ছেন। সুপারি বাগান মালিকরা প্রতি বছরই সুপারি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। ফলন বেশি হওয়ায় বাজারদর একটু কম। জেলায় চলতি মৌসুমে ৭০০ হেক্টর জমিতে সুপারি আবাদ হয়েছে। লাভজনক বিধায় ফসলটি গ্রামীণ অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে।’
জানা গেছে, জেলার ৪৭১টি গ্রামের মধ্যে রাজাপুরের ৫৪টি গ্রামে এবার সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব সুপারি জেলার চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। সুপারি কিনতে দূর-দূরান্তের পাইকাররা স্থানীয় বাজারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ঝালকাঠির সুপারি ভারত, চীন, থাইল্যান্ডে রপ্তানি হয়। যশোর ও বেনাপোলের কিছু ব্যবসায়ী ঝালকাঠি থেকে সুপারি কিনে তা ভারতে এবং চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা চীন ও থাইল্যান্ডে রপ্তানি করেন।
আরও পড়ুন
শেকড় প্রযুক্তিতে ১০ গুণ বেশি সবজি চাষে বাজিমাত
আনারকলি ফল চাষে সফল ঝিনাইদহের স্টালিন
সদর উপজেলার ছত্রকান্দা হাটে সুপারি বেচাকেনা করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রাজাপুরের বাদুরতলা, সাতুরিয়ার লেবুবুনিয়াসহ জেলার ৮৯টি সাপ্তাহিক হাটে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে ভিড় জমাচ্ছেন শত শত কৃষক ও পাইকার। বেচাকেনা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সুপারি।
রাজাপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ বছর রাজাপুর উপজেলার ৫৪টি গ্রামের ৩০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সুপারির বাগানে বাম্পার ফলন হয়েছে। অনেকে আবার বাড়ির পাশে সুপারি গাছ লাগিয়েও ভালো ফলন পেয়েছেন। গত এক যুগের মধ্যে এ বছর সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি বিভাগ। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে সুপারির দাম ভালো না থাকায় সুপারি বাগান মালিকরা হতাশায় ভুগছেন।
বাজারগুলোয় স্থানীয় হিসাব অনুযায়ী প্রতি কুড়ি (২১০ দশটি সুপারিতে এক কুড়ি) সুপারি ২২০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে রাজাপুরের সুপারির সুখ্যাতি থাকায় পাইকারদের হাত ঘুরে বড় জাতের সুপারি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।
রাজাপুরের চাড়াখালীর সুপারি বাগান মালিক কিসমত ফরাজী বলেন, ‘গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছর ফলন হয়েছে তিনগুণ। সুপারির আকারও হয়েছে অনেক বড়। দাম কম হলেও এ বছর আমি লক্ষাধিক টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’
একই গ্রামের রাসেল ব্যাপারী বলেন, ‘আমার ২ একর জমিতে সুপারি বাগান আছে। এ বছর বৃষ্টির কারণে সুপারির ফলন ভালো হয়েছে। কোনো পোকার আক্রমণও নেই। এরই মধ্যে ২ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। বাগানে আরও সুপারি আছে। বর্তমানে যে বাজারদর চলছে, তা সন্তোষজনক নয়। প্রতি বছরের চেয়ে এ বছর দাম তুলনামূলক অনেক কম।’
রাজাপুরের বাঘরি বাজারে ভ্যানগাড়িতে করে সুপারি নিয়ে আসা হাসান জানান, এক ভ্যানগাড়ি সুপারি ১ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এগুলো পাইকাররা কিনে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি করেন।
চট্টগ্রাম থেকে সুপারি কিনতে আসা পাইকার গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা এখান থেকে সুপারি কিনে ট্রাকযোগে চট্টগ্রাম নিয়ে যাই। সেখানে গিয়ে আড়তে সুপারির আকার নির্ধারণ করে বড় সাইজগুলো বিদেশে রপ্তানির জন্য মজুত করি এবং অন্য সুপারি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করছি।’
মো. আতিকুর রহমান/এসইউ/জিকেএস