টঙ্গীতে ট্রাভেল ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো যুবকের ৮ টুকরো মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় ক্লুলেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ হত্যার ঘটনায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অভিযান চালিয়ে মূলহোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতাররা হলেন- মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেক (৪২), তার স্ত্রী শাওন বেগম (৩২) ও সাজ্জাদ হোসেন রনি (২৫)।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে উত্তরা র্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান।
র্যাব জানায়, নিহতের নাম- অলি মিয়া (৩৫)। এছাড়া গ্রেফতার আপেল মাহমুদ সাদেকের স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে খারাপ কথা বলতেন নিহত অলি মিয়া। এই বিষয়টিসহ মোট তিনটি কারণে অলিকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর মরদেহ গুমের জন্য বাথরুমে বসে ৮ টুকরো করে আসামিরা। এ সময় পাহারা দেয় গ্রেফতার আপেলের স্ত্রী শাওন। পরে লাশের ৮ টুকরো পলিথিন ব্যাগে ভরে ট্র্যাভেল ব্যাগে করে অটোরিকশায় নিয়ে ফেলে দেওয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আশিকুর রহমান বলেন, গত ৮ আগস্ট সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরের টঙ্গী টু কালীগঞ্জগামী আঞ্চলিক মহাসড়কের মাছিমপুর এলাকায় স্টেশন রোডে দুটি ট্রাভেল ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। পড়ে থাকা ব্যাগ থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ব্যাগ খুলে দেখতে পায় পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একজন যুবকের অর্ধগলিত ও মাথাবিহীন ৮ খণ্ড মরদেহ। পরবর্তীতে তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় নিহত ব্যক্তির নাম-পরিচয় শনাক্ত করা হয়। নিহত অলি মিয়ারা বাড়ি নরসিংদী সদরের করিমপুর গ্রামে।
র্যাবের ধারণা, হত্যাকাণ্ডটি পূর্ব পরিকল্পিত এবং মরদেহ গুম করার উদ্দেশে মাথার অংশ অজ্ঞাতস্থানে লুকিয়ে রাখে গ্রেফতারকৃতরা
নিহতের স্ত্রী শাহানা আক্তারের ভাষ্যমতে, গত ৪ আগস্ট থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত নিহত অলি মিয়ার নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে নিহত আলি মিয়া কল রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে সর্বশেষ ৬ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে কল দেওয়া হলে অলি মিয়ার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় এবং ৮ আগস্ট মৃত্যুর সংবাদ পান তিনি।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিহতের স্ত্রী শাহানা আক্তার বাদী হয়ে টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর ক্লুলেস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আসামিদের গ্রেফতারের জন্য র্যাব-১ এর আভিযানিক দল বিষয়টি আমলে নিয়ে মূল পরিকল্পনাকারীকে ধরার জন্য ছায়া-তদন্ত শুরু করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৯ আগস্ট র্যাব-১ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেক, সাজ্জাদ হোসেন রনি ও শাওন বেগম চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানাধীন জঙ্গল সলিমপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ক্লুলেস মার্ডার মামলার মূলহোতা আপেল মাহমুদ সাদেক নিহত অলি মিয়াকে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন। গ্রেফতার সময় আসামিদের থেকে তিনটি মোবাইল, তিনটি সিম কার্ড, নগদ ১৫০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা-
র্যাব কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বলেন, গ্রেফতার আপেল মাহমুদ সাদেকের স্ত্রীর চরিত্র সম্পর্কে খারাপ কথা বলা, আপেলের ভাগিনাকে খুন করার পরিকল্পনা জেনে যাওয়া এবং অলি মিয়া এবং আসামি সাজ্জাদ হোসেন রনিকে ২/৩ বছর আগে লোকজন দিয়ে মারধর করা- এ তিনটি কারণে অলিকে হত্যা করা হয়।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেফতার আপেল ও রনি আগে একাধিকবার অলি মিয়াকে ট্রেনের নিচে চাপা দেওয়ার জন্য রেললাইনে নিয়ে যায়। এমনকি হত্যাকাণ্ডের দিন ৬ আগস্ট সকালের দিকে অলিকে হত্যার জন্য আসামি আপেল ও রনি রেল লাইনে নিয়ে যায়, কিন্তু ওই সময় ট্রেন না আসায় অলি, আপেল, রনি আবার আপেলের বাসায় চলে আসে। একই দিনে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তারা তিনজন একসঙ্গে সকালের নাস্তা করে এবং নাস্তার পরে আসামি আপেলের স্ত্রী রান্না ঘরে থাকা অবস্থায় আপেল ও রনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের রুমের দরজা বন্ধ করে অলিকে বিছানায় ফেলে দড়ি ও বেল্ট দিয়ে পা বেঁধে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পরে তারা নিহত অলি মিয়ার মরদেহ টয়লেটের ভেতর রেখে দেয়। পরে সন্ধ্যায় বাজার থেকে ছুরি, কসটেপ, কালো ব্যাগ ইত্যাদি নিয়ে আসেন এবং একইদিন রাত ১১ট ৪৫ মিনিট থেকে ১২টার সময় অলির মরদেহটি বাথরুমের ভেতরে রেখে আপেল ও রনি মরদেহের বিভিন্ন অংশ টুকরো করেন। পরে টুকরো অংশ কালো পলিথিনের ভেতরে রেখে বাথরুমের সানসেটে ওপর রেখে দেয়। এসময় আপেলের স্ত্রী শাওন বারান্দায় বসে পাহারা দেয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে লে. কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, হত্যার পর ৭ আগস্ট মরদেহ ফেলার কোনো সুযোগ না পেয়ে ৮ আগস্ট সকাল ৫টা ৫৬ মিনিটের দিকে আপেল ও রনি পলিথিন ভর্তি মরদেহর ব্যাগটি অটোরিকশাযোগে টঙ্গী স্টেশন রোডের হাজী বিরিয়ানি হাউজ ও নান্না বিরিয়ানি হাউজের সামনে ফেলে রেখে চলে যায়।
টিটি/এনএইচআর/জেআইএম