গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানাধীন টিএনটি বাজার জামে মসজিদের খতিব আলহাজ ক্বারি মুফতি মহিবুল্লাহ মিয়াজী কর্তৃক দাবি করা ‘অপহরণ’ ঘটনাটি পুলিশ ও তদন্তে নাটক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং চিকিৎসকের প্রতিবেদনেও তার বক্তব্যের সঙ্গে বড় ধরনের অসংগতি পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে এই খতিবের বিরুদ্ধেই অভিযোগপত্র দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল পৌনে ৭টার পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানাধীন হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেন। খবর পেয়ে তেঁতুলিয়া থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত ২২ অক্টোবর সকাল ৭টার দিকে ঘটনাস্থল হিসেবে উল্লিখিত শিলমুন সিএনজির সামনের এলাকায় সিসিটিভি ফুটেজে মুহিব্বুল্লাহকে দ্রুত হেঁটে যেতে দেখা যায়। তার সঙ্গে কোনো ব্যক্তি বা অ্যাম্বুলেন্সের উপস্থিতি মেলেনি। মোবাইল ট্র্যাকিং ও ফুটেজ বিশ্লেষণে জানা যায়, তিনি ক্যামেরার আড়াল হয়ে যান এবং পরে সিরাজগঞ্জ হয়ে পঞ্চগড়ে পৌঁছান।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন জানান, শরীরে কোনো দৃশ্যমান আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি; শুধু ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, খতিব নিজেই নিজের পায়ে শিকল বেঁধেছিলেন—পুরো ঘটনাটি ছিল তার নিজের সাজানো নাটক।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, খতিব কর্তৃক উল্লিখিত হুমকির চিঠি সম্পর্কেও অনুসন্ধান চলছে এবং ঘটনার পেছনের উদ্দেশ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাত ১০টার দিকে মাওলানা মুহিব্বুল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টঙ্গী পূর্ব থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্রিফিং দেওয়া হয়নি, তবে সূত্র জানায়—জিজ্ঞাসাবাদের সময় মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ স্বীকার করেছেন যে ঘটনাটি তার নিজের ইচ্ছাতেই ঘটেছে।
এ বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের জিএমপি হেডকোয়ার্টারে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
এছাড়াও ওই খতিবের নিখোঁজ বিষয়ে নতুন তথ্য দিয়েছেন আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের সামি। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি জানান, বিভিন্ন অ্যাংগেল থেকে নেওয়া চারটি ফুটেজ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে মুহিব্বুল্লাহ পাম্পের সামনে দিয়ে দ্রুত হেঁটে যাচ্ছেন। ফিলিং স্টেশনের সামনে একটি অ্যাম্বুলেন্স পথরোধ করে তাকে অপহরণের যে দাবিটি করা হয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে এরকম কোনো ঘটনা দেখা যায়নি; বরং তাকে একাই দ্রুত গতিতে হেঁটে যেতে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, সামনের সেতুর ওপরে পুলিশের স্থাপন করা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় মুহিব্বুল্লাহ একাই হাঁটছেন। অথচ এজাহারে তিনি উল্লেখ করেছেন, ফিলিং স্টেশনের সামনে তাকে অপহরণ করা হয়।
পরিশেষে আলজাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের জানান, ৬টা ৫৪ মিনিটে এলাকা থেকে রওনা হয়ে তিনি প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ফিলিং স্টেশনে পৌঁছান সকাল ৭টা ১৮ মিনিটে। ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. সোলেইমান নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যদের জানান ‘তিন দফায় পুলিশের বিভিন্ন শাখা আমাদের সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে, আমাদের ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে হুজুরকে অপহরণ করা হয়নি’।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল আনুমানিক ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে তিনি টঙ্গী পূর্ব থানার টিএনটি বাজার জামে মসজিদ সংলগ্ন বাসা থেকে বের হন। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। সন্ধ্যার পর তার নিখোঁজ হওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ইসলামী সংগঠন, আলেম-ওলামা ও স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। এর এক দিন পর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থানাধীন হেলিপ্যাড বাজার এলাকায় শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

2 hours ago
5








English (US) ·