টাঙ্গাইলে ফেসবুকে কমেন্টের জেরে বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর

1 day ago 9

টাঙ্গাইলের সখীপুরের বড়চওনা গ্রামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কমেন্টে ‘মুসলমানদের নিয়ে কটূক্তি’র অভিযোগে শংকর সাহা নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে শংকর সাহার অনুপস্থিতিতে তার নাতি জয় সাহাকে মারধর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। শনিবার (২৯ মার্চ) এ ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি সমাধানের জন্য মঙ্গলবার (০১ এপ্রিল) উপজেলা পরিষদের হলরুমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল রনী, ওসি জাকির হোসেনসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা, উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান সাজুসহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত হয়েছেন। 

তবে বিষয়টি আজ সমাধান না হলেও আগামীকাল বুধবার (০২ এপ্রিল) সকাল ১১টায় একই স্থানে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান।  

মঙ্গলবার সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করা জিনিসপত্রের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বাড়িটি বসবাস উপযোগী না থাকায় এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে শংকর সাহা টাঙ্গাইল শহরে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। 

উল্লেখ্য, শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেলে শংকর সাহার ফেসবুক আইডি থেকে মুসলমানদের বিষয়ে একটি আপত্তিকর মন্তব্য করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। মুহূর্তেই ওই মন্তব্যের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হন। 

তবে অভিযুক্ত শংকর সাহা জানান, তার ফেসবুক আইডি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ হ্যাক করে ওই মন্তব্য করেছে। 

এ ঘটনায় শনিবার রাতেই তিনি সখীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

শংকর সাহা জানান, তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একটি পক্ষ তাকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। 

হামলায় জড়িতদের বিচার দাবি করে বলেন, আমার বাড়ির সব জিনিসপত্র ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে। 

এ ছাড়া আমার বাড়িতে সংরক্ষণে রাখা বাবা, দাদার হাতের অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র ধ্বংস ও চুরি করে নিয়ে গেছে। 

শংকর সাহার বোন স্থানীয় দোকানদার মায়া রানী সাহা বলেন, আমি ভাঙচুরকারীদের পায়ে ধরে বললাম আমাদের ক্ষমা করে দেন। মূল্যবান যা কিছু আছে সব নিয়ে যান কিন্তু বাড়ি-ঘর ভাঙবেন না। কিন্তু তারা কোনো কথা শুনল না। ভাঙচুর করেই গেল।

হামলাকারীদের বিষয়ে মায়া রানী সাহা আরও বলেন, সবাই মিছিল করে চলে যাচ্ছিল ঠিক এ সময় স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. সবুজ, অবিভক্ত কালিয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজহারুল ইসলাম ও তার ছেলে শাহরিয়ার ওজায়েল এবং  ছাত্রলীগ কর্মী মো. মারুফ হাসান সবাইকে ডেকে বাড়িতে হামলা করার জন্য উসকানি দেয়।

হামলার বিষয়ে অভিযুক্ত সবুজ বলে, আমি মিছিলে ছিলাম কিন্তু বাড়ি ভাঙচুরে জড়িত নই। 

এদিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে শংকর সাহার বিরুদ্ধে সবুজ থানায় মামলা করেছেন।

অন্যদিকে ঘটনার পরের দিনই উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শংকর সাহাকে বড়চওনা ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন জানান, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে সবুজ নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি মামলা করেছেন। ওই মামলায় শংকর সাহাকে আসামি করা হয়েছে।

পরে বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এনে শংকর সাহার স্ত্রী শিউলি রানী অজ্ঞাতনামা এক থেকে দেড়শ ব্যক্তিকে আসামি করে পাল্টা মামলা করেছেন।

Read Entire Article