টানা উত্থানের পর টানা পতনে শেয়ারবাজার, কারণ কি?

1 month ago 8

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার (১০ আগস্ট) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমার পাশাপাশি কমেছে সবকটি মূল্য সূচক। এর মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হলো।

এর আগে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজার ঊর্ধ্বমুখী ছিলো। তার আগে টানা আট কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর এক কার্যদিবস শেয়ারবাজারে দরপতন হয়।

এদিকে টানা উত্থানের পর এখন টানা দরপতন দেখা দেওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

তবে শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দরপতনের কারণে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। টানা উত্থানের কারণে কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বেশ বেড়ে গেছে। ফলে যে বিনিয়োগকারীরা লাভে রয়েছেন, তারা মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। সে কারণে এখন কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে।

তারা বলছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বচনের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে নির্বাচন নিয়ে এখন শঙ্কা কেটে গেছে। কারো কারো মনে কিছুটা শঙ্কা থাকলেও তা ধীরে ধীরে কেটে যাবে। ফলে আশা করা যায় শিগগির বাজার ঘরে দাঁড়াবে। তাছাড়া বাজারে মূল্য সংশোধন হলেও লেনদেনের গতি ভালো রয়েছে। নিয়মিত ৭০০ কোটি টাকার ওপরে লেনদেন হচ্ছে, এতে বোঝা যাচ্ছে বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হচ্ছেন।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে দিনের শুরুতে সূচকের ঊর্ধ্বমুখীর দেখা মিলে। লেনদেনের প্রথম আড়াই ঘণ্টা বাজারে কয়েক দফা উত্থান-পতন হয়। তবে শেষ দুই ঘণ্টার মতো টানা দরপতন হয়। এতে মূল্য সূচকের বড় পতন দিয়েই দিনের লেনদেন শেষ হয়।

দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৪৭টির। আর ৪৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৫৭ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

এর মাধ্যমে টানা চার কার্যদিবসের পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমলো ১৮৫ পয়েন্ট। এর আগে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ৪ হাজার ৬৭৭ পয়েন্ট থেকে দফায় দফায় বেড়ে ৫ হাজার ৫৩৬ পয়েন্টে উঠে। ২৮ কার্যদিবসে এই উত্থান হয়। অর্থাৎ ২৮ কার্যদিবসে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক বাড়ে ৮৫৯ পয়েন্ট।

শেয়ারবাজারে টানা উত্থানের পর টানা দরপতনের কারণ হিসেবে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ৩০০ পয়েন্ট তিন দিনে বাড়ছে। এই বাড়াটা আমাদের বাজার সাসটেন করতে পারেনি। এ জন্য মূল্য সংশোধন হচ্ছে। তবে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আছে। আগ্রহ থাকার কারণেই ৭০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। লেনদেনের গতি ধরে রাখতে পারলে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।

প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার পরও বাজারে দরপতন দেখা যাচ্ছে, তাহলে কি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এখনো কোনো শঙ্কা আছে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নির্বচন নিয়ে শঙ্কা কেটে গেছে। এরপরও কোনো শঙ্কা থাকলে ধীরে ধীরে কেটে যাবে বলে আমরা আশা করছি। আমাদের ধারণ শিগগির আমরা বাজারে পজেটিভ মুভমেন্ট দেখতে পারবো।

ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন জাগো নিউজকে বলেন, এখন যে দরপতন হচ্ছে তাতে আমি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু দেখছি না। এর আগে টানা উত্থানের কারণে সূচক ৮০০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই একটি পক্ষ মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এতে কিছুটা মূল্য সংশোধন হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক।

এদিকে অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক রোববার ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬২ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৩১ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৬৬ পয়েন্টে নেমে গেছে।

মূল্য সূচক পতন হলেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৭৬০ কোটি ৬৪ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৭০৬ কোটি ৪০ টাকা। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৫৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। ২১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মালেক স্পিনিং।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিটি ব্যাংক, হাক্কানি পাল্প, সোনালী পেপার, বেক্সিমকো ফার্মা, রহিমা ফুড, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ এবং স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১৫৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২২২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৯টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

এমএএস/এনএইচআর/জিকেএস

Read Entire Article