সমাজ আলোকিত করা ও মানবিক সেবার উদ্দেশ্যে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করেন পাবনার বেড়া উপজেলার কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর নেতৃত্বে ছিলেন ওই এলাকার স্কুল শিক্ষার্থী মেহরাব হোসেন।
দীর্ঘ নয় বছরের সামাজিক ও মানবিক সেবায় অবদান আজ তাকে এনে দিয়েছে বেস্ট ভলান্টিয়ার পুরস্কার। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক ও দাতব্য সংস্থা ভলান্টিয়ারি সার্ভিস ওভারসিজ (ভিএসও বাংলাদেশ) তাকে এ পুরস্কারে ভূষিত করে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ভলান্টিয়ার দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এতে সারাদেশ থেকে সেরা ২০ ভলান্টিয়ারকে বেস্ট ভলান্টিয়ার হিসেবে মনোনীত করা হয়।
মেহরাব বেড়ার সান্যাল পাড়ার মাসুদ রানা বিপ্লবের ছেলে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে ভিএসও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিরুল হাসান কামালের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রুভ নিউট্রিশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুবাবা খন্দকার, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকদ্দেম হোসাইন, ব্রিটিশ কাউন্সিল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন রোলান্ড ফরবেস, ইউএনএফপির কান্ট্রি ডিরেক্টর মাসাকি ওয়াটাবে, সুইডেন দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নায়োকা মার্টিনেস ব্যাকস্ট্রোম, ইউএসএআইডি বাংলাদেশের মানবাধিকার বিষয়ক ডিরেক্টর এলেনা জে ট্যান্সি ও নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত মি. এন্ড্রে কারস্টেন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
২০১৬ সালের মার্চে পাবনার বেড়া উপজেলার বিপিন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪ বছর বয়সী শিক্ষার্থী মেহেরাব হোসেন তার পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে ‘শিক্ষার্থী সহযোগিতা সংগঠন’ এর যাত্রা শুরু করেন।
এসময় তারা সিদ্ধান্ত নেন, টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে মানবকল্যাণের কাজে লাগাবেন। প্রোগ্রামের জন্য তারা পাঁচজন সহপাঠীদের থেকে ৫-১০ টাকা করে তুলতেন। মেহেরাব ১০০, তার বোন ১০০ আর তার ক্লাসের সব বন্ধুরা মিলে ৩০০ টাকা দেন। এই ৫০০ টাকায় ১০ গরিব অসহায়কে ময়দা ও সেমাই কিনে দিয়ে শুরু করেন সংগঠনের কার্যক্রম।
এ সংগঠনের কার্যক্রমগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলে স্কুলে স্কুলে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। বেড়ার প্রত্যন্ত স্কুলগুলোতে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনা করে শিক্ষার্থী জ্ঞান চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টার মাধ্যমে আলোকিত সমাজ নির্মাণের পথে যাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। বর্তমানে সংগঠনটির দুটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি রয়েছে। এছাড়া এতিমখানা পরিচালনাসহ দুই টাকায় আমেজ প্রোজেক্টের মাধ্যমে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে সহযোগিতা দেয় এ সংগঠন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতেও তাদের কার্যক্রম রয়েছে।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সেরা ভলান্টিয়ারি পুরস্কার জয়ী মেহরাব হোসেন বলেন, মাত্র ৫০০ টাকায় আমরা কাজ শুরু করেছিলাম ক্ষুদ্র পরিসরে। অনেকেই ভেবেছেন এ দিয়ে আর কি সেবা হবে। কখনো কখনো আমাদেরও এমনটা মনে হলেও মনোবল হারাইনি। সবার মনোবল ও ভালো কাজের প্রতি সদিচ্ছায় আমরা এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। এর ফলে বেড়ায় এখন আমাদের কর্মপরিধি ব্যাপক। এতিমখানা ও ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি পরিচালনাসহ নানা ধরনের সেবামূলক কাজ চলছে। এ পুরস্কার আমাদের কাজের গতি আরও বাড়িয়ে দেবে।
আলমগীর হোসাইন/জেডএইচ/এমএস