টেক্সাসের বন্যা এত প্রাণঘাতী হলো কীভাবে?

2 months ago 6

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আরও অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ছুটি কাটাতে যাওয়া পর্যটক ও ক্যাম্পারদের অনেকে এই বন্যার কবলে পড়েন। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছে গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্প ‘ক্যাম্প মিস্টিক’-এর বহু শিশু শিক্ষার্থী।

গভীর রাতে আকস্মিক দুর্যোগ

আকস্মিক এই বন্যা শুরু হয় গত শুক্রবার ভোররাতে, যখন বেশিরভাগ মানুষ ঘুমিয়ে ছিলেন। টেক্সাসের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ‘হিল কান্ট্রি’ অঞ্চলটি প্রাকৃতিকভাবেই বন্যাপ্রবণ। অঞ্চলটির শুষ্ক, কাদামাটির জমি বৃষ্টির পানি সহজে শোষণ করতে পারে না। ফলে পানি দ্রুত স্রোতের সৃষ্টি করে নিচু অঞ্চলে ধেয়ে যায়।

শুক্রবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া দপ্তর ‘মানবজীবনের জন্য বিপজ্জনক’ সতর্কবার্তা জারি করে। কিছু এলাকায় মাত্র ৪৫ মিনিটের মধ্যে নদীর পানি ২৬ ফুট (প্রায় ৮ মিটার) বেড়ে যায়, বিশেষ করে গুয়াদালুপে নদীতে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভোর ৫টার মধ্যেই পানি বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

মৃতদের অধিকাংশ ক্যাম্পে থাকা শিশু

রোববার সকালে নিশ্চিত হওয়া মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৭ জন। এর মধ্যে কের কাউন্টিতে মারা যান ৫৯ জন এবং আশপাশের অঞ্চলে আরও আটজন।

কের কাউন্টির মৃতদের মধ্যে ৩৮ জন ছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ২১ জন শিশু। মৃত শিশুদের মধ্যে অন্তত ১৬ জন ছিলেন ক্যাম্প মিস্টিকের শিক্ষার্থী। আরও ১১ জন মেয়ে তখনো নিখোঁজ বলে জানানো হয়েছে। তবে আশপাশের অন্যান্য ক্যাম্প ও ক্যাম্পগ্রাউন্ড থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সংখ্যা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

সতর্কতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কর্তৃপক্ষ

অনেকে অভিযোগ করেছেন, তারা কোনো জরুরি সতর্কবার্তা পাননি। অনেকের ভাষায়, এটি ছিল ‘মৃত্যুর অন্ধকার প্রাচীর’, যা হঠাৎ করে সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

কের কাউন্টির বিচারক কেলি বলেন, ‘কেউ এটা আসতে দেখেনি।’

বিশেষ করে, নদীর ধারে অবস্থিত ক্যাম্পগুলোকে কেন আগেভাগে সতর্ক করা হয়নি—সেই প্রশ্নে প্রশাসনের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানান, অতিরিক্ত সতর্কতা দিলে মানুষ গুরুত্ব না-ও দিতে পারে, তবু পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেখে এমন যুক্তি মানতে নারাজ অনেকে।

সতর্কতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে রোববার একপর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যান স্থানীয় কর্মকর্তারা।

পুনর্গঠনে সময় লাগবে বহু বছর

এই বন্যায় অনেক ঘরবাড়ি, ক্যাম্প ও স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। হেলিকপ্টারে পর্যবেক্ষণের পর বিচারক কেলি বলেন, এগুলো পরিষ্কার করতেই অনেক বছর লেগে যাবে, পুনর্নির্মাণ তো অনেক দূরের কথা।

এটিকে বলা হচ্ছে ‘টেক্সাসের অন্যতম বৃহত্তম উদ্ধার ও পুনরুদ্ধার অভিযান।’

সূত্র: এপি, ইউএনবি
কেএএ/

Read Entire Article