ট্রাইব্যুনালে নাহিদ ইসলামকে হাসিনার আইনজীবীর জেরা
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা জুলাই-আগস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ মামলায় আজ তাকে ট্রাইব্যুনালে জেরা করছেন শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী।
রোবববার (২১ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হন।
এর আগে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে প্রথমবারের মতো নাহিদ ইসলামকে জেরা করা হয়। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালে ১৬ ও ১৭ সেপ্টেম্বর টানা দুদিন জবানবন্দি দেন জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম। আজকের কার্যক্রমে মামলার অন্যতম রাজসাক্ষী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
জবানবন্দিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, গত বছরের ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ ও ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ আখ্যা দিয়ে কোটাপ্রথার পক্ষে অবস্থান নেন। তার মতে, এই বক্তব্য আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার একটি বৈধতা তৈরি করে দেয়। কারণ, সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ন্যায্য আন্দোলন হলেই আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলা হতো, যাতে আন্দোলনের ন্যায্যতা খাটো হয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, শেখ হাসিনার ওই মন্তব্যে দেশের শিক্ষার্থীরা অপমানিত বোধ করেন। সেই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানান।
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ আরও বলেন, ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দেন যে, আন্দোলন ঠেকাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট। পরদিন, ১৬ জুলাই সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। ওইদিন পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ শহীদ হন। এ ছাড়া চট্টগ্রামের ওয়াসিমসহ আরও ছয়জন সেদিন প্রাণ হারান। ১৭ জুলাই ডিজিএফআই আন্দোলন প্রত্যাহার করে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
তিনি আরও বলেন, ১৭ জুলাই রাতে দেশব্যাপী পূর্ণাঙ্গ শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ১৮ জুলাই সারা দেশে ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে আসেন। বিশেষ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাজপথে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। নাহিদের মতে, সেই সময় আন্দোলনের নেতাদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আত্মগোপনে চলে যান।
নাহিদ আরও জানান, ওইদিন সারা দেশে বহু ছাত্র-জনতা আহত ও নিহত হন। রাতে দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একইভাবে ১৯ জুলাই পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলি চালায়, ফলে ওইদিনও বহু মানুষ আহত ও নিহত হন।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। প্রসিকিউশন তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ উত্থাপন করেছে।
মামলার অভিযোগপত্র মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পৃষ্ঠা জব্দ তালিকা ও অন্যান্য দালিলিক প্রমাণ এবং ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকার বিবরণ রয়েছে। এ মামলায় ৮১ জনকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।