ট্রাম্প আর মাস্কের সম্পর্ক কি ঠিক হয়ে গেছে?

3 hours ago 5

ট্রাম্প আর মাস্কের সম্পর্ক কি ঠিক হয়ে গেছে? সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ছবি দেখে তেমনটাই তো মনে হচ্ছে! রক্ষণশীল ডেমোক্র্যাট নেতা চার্লি কার্কের স্মরণে অ্যারিজোনার ফিনিক্স শহরের স্টেট ফার্ম স্টেডিয়ামে আয়োজন করা হয়েছিল স্মরণসভা। আর সেখানে কিছুক্ষণের জন্য দর্শকসারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঠিক পাশে বসতে দেখা যায় টেক জায়ান্ট টেসলার স্বত্ত্বাধিকারী ইলন মাস্ককে।

স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্সে বসে থাকার সময় এক পর্যায়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে করমর্দন করেন ইলন মাস্ক। ভিডিওতে তাদের একে অপরের সঙ্গে কথাও বলতে দেখা যায়।

আপাতদৃষ্টিতে এই ঘটনাকে খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ মনে না হলেও জুন মাসে ট্রাম্প-মাস্ক দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসার পর এই প্রথমবার দুইজনকে একসঙ্গে দেখা গেলো। আর সে কারণেই এই ঘটনা নিয়ে বেশ জল্পনা চলছে।

আরও পড়ুন>>

‘এই প্রথম তার বিষয়ে শুনলাম’—বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজী সম্পর্কে মাস্ক

ইলন মাস্কের টেসলার সামনে মহাবিপদ!

যুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক

দুজনের আলোচনার যেসব ভিডিও দেখা গেছে, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একাধিকবার ইলন মাস্কের পায়ে বন্ধুত্বসুলভভাবে চাপড় দিতে দেখা গেছে।

এক্সে হোয়াইট হাউজের আনুষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট থেকেও দুজনের একসঙ্গে বসে থাকার ছবি শেয়ার করা হয়। ছবির ক্যাপশন ছিল: ‘ফর চার্লি’ অর্থাৎ চার্লির জন্য।

ইলন মাস্ক আবার তার এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে হোয়াইট হাউজের পোস্ট করা সেই ছবিটি রিপোস্টও করেছেন।

গত ১০ সেপ্টেম্বর আততায়ীর গুলিতে নিহত হন চার্লি কার্ক। তার উদ্দেশ্যে আয়োজিত স্মরণসভায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলেসহ মার্কিন প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বক্তব্য রাখেন।

এসময় চার্লি কার্ককে ‘আমেরিকান হিরো’ আখ্যায়িত করে ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে, কারণ তিনি সাহসিকতার সঙ্গে জীবনযাপন করতেন এবং চমৎকার বক্তা ছিলেন, বলেন ট্রাম্প।

চার্লি কার্কের স্ত্রী এরিকা স্মরণসভায় দেওয়া বক্তব্যে তার স্বামীর আততায়ীকে ক্ষমা করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমার স্বামী চার্লি তরুণদের বাঁচানোর লক্ষ্যে কাজ করছিলেন। তেমনই একজন তরুণ তাকে গুলি করে হত্যা করেছেন। আমি তাকে ক্ষমা করলাম, কারণ ঘৃণার জবাব ঘৃণা দিয়ে দিতে হয় না।

তবে রক্ষণশীল রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী চার্লি কার্কের অনেক বক্তব্যই অনেক সময় জাতিবিদ্বেষী ও নারীবিদ্বেষী হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। তার বক্তব্য অভিবাসন বিরোধী ও সমকামী বিদ্বেষী হিসেবেও সমালোচনার মুখে পড়েছে অনেক সময়।

রক্ষণশীল চার্লি কার্কের স্মরণে আয়োজিত সভায় রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ট্রাম্প আর একই ধরনের মতবাদে বিশ্বাসী ইলন মাস্কের দেখা হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণই মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

গত বছরের শেষদিকে হওয়া মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণার জন্য প্রায় ৩০ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন ইলন মাস্ক। নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি চাকরি থেকে কর্মী ছাঁটাই সংক্রান্ত একটি বিতর্কিত বিভাগের দায়িত্বও পান মাস্ক।

তবে ট্রাম্পের সাথে মাস্কের বিরোধ সামনে আসতে শুরু করে মে মাসের শেষদিকে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কর ও ব্যয় নীতির সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।

পরের কয়েকদিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করে ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করতে থাকেন এক্সে। ট্রাম্পকে ‘অকৃতজ্ঞ’ বলে তার এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্টও করেন ট্রাম্প।

ট্রাম্পও জুনের প্রথম সপ্তাহে বলেন, ইলন মাস্কের সাথে তার সম্পর্ক ‘শেষ’ হয়ে গেছে। এরপর তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, তিনি এ সম্পর্ক আবার জোড়া লাগাতে চান কি-না, তখন তিনি বলেন ‘না’।

সে সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সসহ রিপাবলিকানদের একটা বড় অংশ ইলন মাস্ককে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছিলেন। জে ডি ভ্যান্স সে সময় একটি পডকাস্টে বলেছিলেন, ইলন মাস্ক বেশি উত্তেজিত হয়ে গেছেন এবং সম্ভবত ফিরে আসার জন্য তাকে আর কখনোই স্বাগত জানানো হবে না।

এর কিছুদিন পর জুলাইয়ে মাস্ক ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল চালু করার ঘোষণা দেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সেই পার্টি তৈরির কার্যক্রমে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এসব ঘটনার পর ‘ট্রাম্প-মাস্ক ব্রোমান্স’ বা ট্রাম্প ও মাস্কের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক একেবারে শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হলেও রোববার রাতের ঘটনার পর সেই সমীকরণ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা
কেএএ/

Read Entire Article