যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু হচ্ছে আগামী ২০ জানুয়ারি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি বারবার বলেছেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলায় জড়িত দাঙ্গাবাজদের ক্ষমা করা এবং বাইডেন প্রশাসনের ট্রান্সজেন্ডার শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা প্রদানকারী নিয়ম বাতিল।
এছাড়াও ট্রাম্পের আরও কিছু সম্ভাব্য পদক্ষেপের দিকে নজর থাকবে গোটা বিশ্বের, বিশেষ করে এশিয়ার। কারণ, তার ওইসব সিদ্ধান্ত এ অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
শুল্ক
ট্রাম্পের মতে, এটি অভিধানের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ।
ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই মেক্সিকো, কানাডা এবং চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তার দাবি, এটি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন এবং ফেন্টানাইলসহ অবৈধ মাদকের প্রবাহ থামাতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন>>
- ট্রাম্পের অভিষেকে বরফের বাগড়া, অনুষ্ঠান হবে ইনডোরে
- অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের ধাক্কা সামলাতে পারবে আমেরিকা?
- ট্রাম্পের আমলে বাইডেনের এশিয়ান মিত্রজোট কি টিকে থাকবে?
প্রচারণার সময় তিনি সব ধরনের পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশ এবং চীনা পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। তবে কোন কোন পণ্য এই শুল্কের আওতায় আসবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
গোল্ডম্যান স্যাশের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইলেকট্রনিকসের মতো ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম শুল্ক আরোপ হতে পারে। কিন্তু কেটলি, গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং ডিশওয়াশারের মতো পণ্যে ৬০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকেরা এরই মধ্যে বড় পরিসরে চীনা পণ্য মজুত করা শুরু করেছেন, যেগুলো উচ্চ শুল্কের আওতায় আসতে পারে।
অভিবাসন
ট্রাম্পের ভাষায়, এটি হবে আমেরিকার ইতিহাসে বৃহত্তম নির্বাসন কর্মসূচি।
ক্ষমতার প্রথম দিনেই অভিবাসনকে অগ্রাধিকার দেবেন ট্রাম্প। তার প্রেস সচিব এবং অভিবাসন উপদেষ্টারা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে একাধিক নির্বাহী আদেশ জারি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মহামারি পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, ভারত, ফিলিপাইন এবং চীনের বিপুল সংখ্যক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।
তবে এশীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য কঠোর পদক্ষেপের কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
জ্বালানি
ড্রিল বেবি, ড্রিল: বলেছেন ট্রাম্প।
জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘প্রহসন’ উল্লেখ করে তিনি বাইডেন প্রশাসনের পরিবেশবিষয়ক নীতি, বিশেষত ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট (আইআরএ) বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার এলজি এনার্জি সল্যুশন এবং চীনের ট্রিনা সোলারসহ বিভিন্ন এশীয় কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করেছে। তবে, আইআরএ’র সহায়তা বন্ধ হলে এসব প্রকল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় আরও রয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ তেল অনুসন্ধান বৃদ্ধি এবং বাইডেন ঘোষিত নতুন অফশোর ড্রিলিং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এসব নীতি এশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক, অভিবাসন ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে সরাসরি প্রভাবিত করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এসব সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
কেএএ/