গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবকে ‘শত্রুতাপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন জর্ডানের বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এই পরিকল্পনা দুই মার্কিন মিত্র দেশের বিরুদ্ধে এবং ফিলিস্তিনের ইস্যুকে ‘প্রশমিত’ করার উদ্দেশ্য ছাড়া কিছু নয়।
ট্রাম্প শনিবার (২৬ জানুয়ারি) বলেছেন, ‘গাজা পরিষ্কার করা’ একটি বিকল্প হতে পারে, যেখানে আরব দেশগুলোর সহযোগিতায় উপত্যকার বাসিন্দাদের জন্য নতুন স্থানে আবাসন তৈরি করা যেতে পারে। এটি ‘অস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদি’ হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জর্ডানের কঠোর অবস্থান
জর্ডান ইতোমধ্যে প্রায় ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর আশ্রয়স্থল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি নিয়ে আমাদের অবস্থান দৃঢ় এবং তা বদলাবে না। জর্ডান শুধু জর্ডানের জন্য এবং ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদের জন্য।
আরও পড়ুন>>
- ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে রেহাই পেলো না আড়াই বছরের শিশু, মাথায় গুলি করে হত্যা
- ১১ মার্কিন চিকিৎসক-নার্সকে গাজা ছাড়তে দিচ্ছে না ইসরায়েল
- গাজাকে খালি করতে চান ট্রাম্প, জাতিগত নিধনের আশঙ্কা
জর্ডানের বিশিষ্ট বিশ্লেষক ওরাইব রান্তাওয়ি বলেন, এই প্রস্তাব শুধু জর্ডান ও মিশরের ওপর চাপ প্রয়োগের বার্তা নয়, বরং এটি একটি ‘বিষময় উপহার’, যা আরব দেশগুলোর ওপর ফিলিস্তিন সংকটের দায় চাপানোর কৌশল।
মিশরের কড়া প্রতিক্রিয়া
প্রতিবেশী মিশরও ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ পরিকল্পনার স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার যেকোনো চেষ্টা, তা সাময়িক হোক বা স্থায়ী, পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করবে এবং শান্তির সম্ভাবনাকে ব্যাহত করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রস্তাব ইসরায়েলের ডানপন্থি নীতির প্রতিফলন এবং মানবিকতার আড়ালে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। মিশর সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ইতিহাস অনুযায়ী সাময়িক পদক্ষেপগুলো শেষ পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে যায়।
ফিলিস্তিনি জনগণের উদ্বেগ
গাজা থেকে স্থানান্তরের যে প্রস্তাব করা হয়েছে, তা ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’ বা বিপর্যয়ের স্মৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই সময়ে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার কারণে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়েছিলেন।
জর্ডানি লেখক আদেল মাহমুদ ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে ‘অবাস্তব’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, জর্ডান ও মিশর কখনোই এ ধরনের পরিকল্পনা মেনে নেবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনি সমস্যার স্থায়ী সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের মাধ্যমে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমসহ ১৯৬৭ সালের সীমানায় একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে মিশর।
সূত্র: এএফপি, শিনহুয়া
কেএএ/