ট্রাম্পের শুল্ক এড়াতে যে কৌশল নিতে পারে কোম্পানিগুলো

2 hours ago 3

১৮৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস কর্মকর্তারা সন্দেহজনক একটি চিনি চালান আটক করেন। তারা মনে করেছিলেন, এর রং ইচ্ছা করে পরিবর্তন করা হয়েছে। তখনকার শুল্ক আইনে গাঢ় রঙের চিনি নিম্নমানের হিসেবে গণ্য হতো এবং এর ওপর কম শুল্ক ধার্য করা হতো। রাসায়নিক পরীক্ষায় কর্মকর্তাদের সন্দেহ সত্য প্রমাণিত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, আমদানিকারক যদি পণ্য পরিবর্তন করে কম শুল্ক দেওয়ার উপায় বের করতে পারেন, তাহলে সেটি বেআইনি নয়।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় প্রতি সপ্তাহেই নতুন আমদানি শুল্ক বসানোর হুমকি দিচ্ছেন। আইনি প্রতিষ্ঠান স্যান্ডলার, ট্রাভিস অ্যান্ড রোজেনবার্গের এডওয়ার্ড স্টেইনারের মতে, এভাবে ব্যাপকহারে শুল্ক বসানো কোম্পানিগুলোর জন্য ‘অস্তিত্বের সংকট’ হয়ে উঠতে পারে। ট্রাম্পের লক্ষ্য অনুযায়ী উৎপাদন যুক্তরাষ্ট্রে স্থানান্তর করা বেশিরভাগ কোম্পানির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাই তারা আরও সৃজনশীল কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করতে পারে।

আরও পড়ুন>>

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের শুল্কনীতি অনুসরণ করে এবারও কিছু ছাড় পাওয়ার আশা করলে হয়তো হতাশ হতে হবে ব্যবসায়ী;রে। ২০১৯ সালে অ্যাপল শুল্ক থেকে ছাড় পেলেও এবার ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ‘কোনো ব্যতিক্রম থাকবে না।’

চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিয়ে যাওয়ার কৌশলও ততটা কার্যকর না-ও হতে পারে। কারণ, ট্রাম্প যদি প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেন, তাহলে থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায় কারখানা স্থানান্তর করেও কোম্পানিগুলো ১৮ মাস পর একই সমস্যায় পড়বে বলে মনে করেন আইনি প্রতিষ্ঠান ডোরসি অ্যান্ড হুইটনির ডেভ টাউনসেন্ড।

বিকল্প কৌশল: শুল্ক ইঞ্জিনিয়ারিং

অনেক প্রতিষ্ঠান শুল্ক এড়ানোর জন্য ‘শুল্ক ইঞ্জিনিয়ারিং’ কৌশল অবলম্বন করতে পারে। এর মধ্যে পণ্যের শ্রেণিবিভাগ পরিবর্তন করা হতে পারে একটি উপায়। আইনি প্রতিষ্ঠান বার্নস, রিচার্ডসন অ্যান্ড কোলবার্নের লরেন্স ফ্রিডম্যান বলেন, শুল্ক একই ধরনের পণ্যের জন্য ভিন্ন হতে পারে এবং এখানেই সুযোগ তৈরি হয়।

ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড কনভার্স এক দশকেরও বেশি সময় আগে তাদের চাক টেইলর অল-স্টার জুতার ডিজাইন পরিবর্তন করে কম শুল্ক দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল। জুতার ইনসোলে অতিরিক্ত ফেল্ট বসিয়ে এটি ‘স্লিপার’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়, যাতে মাত্র ৬ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, যেখানে অন্য জুতার ক্ষেত্রে শুল্ক হার হতো ৪৮ শতাংশ পর্যন্ত।

একইভাবে, কলম্বিয়া স্পোর্টসওয়্যার কোম্পানি টি-শার্ট ও ব্লাউজে কোমরের নিচে পকেট যোগ করে কম শুল্কের ক্যাটাগরিতে ফেলার চেষ্টা করেছে।

একটি জনপ্রিয় কৌশল হলো, পণ্যের উৎপাদনস্থল কৌশলে পরিবর্তন করা। উদাহরণস্বরূপ, হুন্দাইয়ের গাড়ির ক্যাবল হারনেস দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি বলে ধরা হয়, যদিও এর বেশিরভাগ উৎপাদন হয় চীনে। পরে এটি দক্ষিণ কোরিয়ায় নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা ও প্যাকেজিং করা হয়, যাতে কম শুল্কে আমদানি করা যায়। উৎপাদনশীলতা কিছুটা পরিবর্তন করে শুল্ক সুবিধা পাওয়ার এই কৌশল সরাসরি পুরো কারখানা সরিয়ে নেওয়ার চেয়ে সাশ্রয়ী।

শুল্ক পরিশোধ কমানোর উপায়

যদি শুল্ক এড়ানো সম্ভব না হয়, তাহলে কোম্পানিগুলো শুল্কের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করতে পারে। ১৯৮৮ সালের আদালতের এক রায়ে নির্ধারিত হয় যে, আমদানিকারকরা পণ্যের মূল্য সেই মূল্যে নির্ধারণ করতে পারেন, যা প্রস্তুতকারক নির্ধারণ করেছে, মধ্যস্থতাকারীদের বাড়তি মূল্য নয়।

এছাড়া, শুল্ক পরিশোধ বিলম্বিত করাও একটি কৌশল হতে পারে। শিপিং প্রতিষ্ঠান মার্স্ক সম্প্রতি তাদের গ্রাহকদের পরামর্শ দিয়েছে ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ ব্যবহার করার, যেখানে শুল্ক পরিশোধ না করেই পণ্য সংরক্ষণ করা যায় এবং কেবল বিক্রয়ের সময় শুল্ক দিতে হয়। পাশাপাশি, ‘অস্থায়ী আমদানি বন্ড’ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেখানে পুনঃরপ্তানির জন্য আনা পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো হয় না।

তবে ট্রাম্প ভবিষ্যতে এসব কৌশল বন্ধ করে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারেন। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এজেন্সি ‘ফার্স্ট-সেল রুল’ বাতিলের প্রস্তাব দিয়েছিল। যদিও আইনজীবীরা তখন সেটি রক্ষা করেছিলেন। তবে কথা হলো- কিছু ফাঁকফোকর বন্ধ হলেও কোম্পানিগুলো নতুন উপায় বের করবেই। এক বাণিজ্য আইনজীবীর ভাষায়, ‘মানুষ পণ্য চায়, আর সেটি যেভাবেই হোক তারা পাবে।’ তাই ভবিষ্যতে আরও অভিনব কৌশল দেখার সম্ভাবনা প্রবল।

কেএএ/

Read Entire Article