ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী সংসদ। এ নির্বাচনে বিজয়ীদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ। এ সময় তাদের প্রতি নিজের প্রত্যাশার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে এ শুভেচ্ছা জানান তিনি।
পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ লিখেন, ডাকসু-২০২৫ এর নির্বাচনে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী সংসদকে ঐতিহাসিক বিজয়ের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। পাশাপাশি, বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং হল সংসদে বিজয়ীদেরও শুভেচ্ছা। আশা রাখছি— আপনারা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এই একবছর কাজ করবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে নিয়েই কাজ করবেন।
তিনি লিখেন, নির্বাচিত জিএস, এজিএস, সম্পাদকগণ এবং সদস্যবৃন্দের প্রতি আমার অনুরোধ— ফ্যাসিবাদ পরবর্তী আমাদের এই বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে উদারতা, সহনশীলতা, ন্যায় ও ইনসাফের চর্চা অব্যাহত রাখবেন। দল নয়, শিক্ষার্থীরাই যেন আপনাদের একমাত্র প্রায়োরিটি হয়।
তিনি আরও লিখেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার আহ্বান— যাদের উপর দায়িত্ব আপনারা ন্যস্ত করেছেন, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবেন। দায়িত্ব তুলে দিয়ে প্রশ্ন করতে ভুলে যাবেন না।
হাসনাত উল্লেখ করেন, নির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম আমার সহপাঠী, আমার বন্ধু। সাদিকের জন্য শুভকামনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, একাডেমিক নির্বিঘ্নতা নিয়ে সে আপোষহীন থাকবে বলে আমি বিশ্বাস রাখি।
তিনি জানান, সাদিকের কাছে আমার ব্যক্তিগত চাওয়া- নিম্নোক্ত সিস্টেমের ফাঁসি নিশ্চিত করার কাজটার প্রাতিষ্ঠানিক শুরু যেনো তোমার নেতৃত্বে হয়। এ সময় পোস্টের সঙ্গে পুরোনো একটি লেখা জুড়ে দেন হাসনাত। ওই পোস্টে তিনি লিখেন, আমি আবরার হত্যার আসামিদের ফাঁসি চাই না।
হাসনাত লিখেন, আপনি যেদিন প্রথম হলে উঠবেন, ঘণ্টাখানেকর মধ্যেই জানতে পারবেন, হালুয়া রুটি ভাগ হওয়ার মতো আপনিও বিভিন্ন দলে উপদলের নেতাদের মধ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছেন। নতুন মৃত টাটকা লাশ কবরে শোয়ার জন্য যতটা জায়গা পায়, ঠিক ততটা জায়গার জন্য আপনাকে সেদিন থেকে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের কর্মী হিসেবে নিজের মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, একটু শোয়ার জায়গার জন্য আপনাকে মধুতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। আপনি যে উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন, অর্থ্যাৎ পড়াশোনা-মেধা-মননের বিকাশ, সেটি হয়ে যাবে গৌণ; মূখ্য হয়ে যাবে, ‘নেতা তোমার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগান। যেখানে আপনি আপনার ক্যারিয়ারের ভ্যানগার্ড হওয়ার কথা, সেখানে আপনাকে ভ্যানগার্ড হতে হবে পদপ্রত্যাশী নেতাদের প্রটৌকলের। তাদের নজরে পরার জন্য ক্লাস-লাইব্রেরি ফাঁকি দিয়ে হলেও প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।
‘কোন কারণে প্রোগ্রাম মিস হলে শাস্তিস্বরুপ চার-পাঁচদিনের জন্য আপনাকে হারাতে হবে পাঁচফুট বাই দুইফুটের শোয়ার জায়গাটাও। এই একটা শোয়ার জায়গার দোহাই দিয়ে আপনাকে নিবেদিতে ছাত্র থেকে নিবেদিত পা-চাঁটা তেলবাজ চেতনাদারী হতে বাধ্য করা হবে। পড়াশোনা, ক্লাস,লাইব্রেরি সবকিছু ছাপিয়ে আপনি হবেন একটা কঙ্কালসাড় অন্তঃসারশূন্য চেতনাবাজ।’
এনসিপির এ নেতা লিখেন, এই সিস্টেমের মধ্যে দিয়ে আপনি যখন আবার সেকেন্ড ইয়ারে উঠবেন, বড় ভাই হবেন,তখন আবার এই চেতনার ঝান্ডা জুনিয়রদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার এজেন্ট হিসবে নিজে পৈশাচিক আনন্দ পাবেন। ফার্স্ট ইয়ারে নির্যাতিত হওয়া ছেলেটাই সেকেন্ড ইয়ারে উঠে নিপীড়কে ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। কারণ, ফার্স্ট ইয়ারে তাদের মধ্যে তৈরি হয় ক্ষোভ, ঘৃণা, ক্রোধ।এই ক্রোধের আগুন তাঁরা সেকেন্ড ইয়ারে উঠে জুনিয়রদের সাথে মেটাতে থাকে। এটা একটা নেভার এন্ডিং সাইকেল। ফার্স্ট ইয়ারে আপনি নির্যাতিত,সেকেন্ড ইয়ারে আপনি নিপীড়ক।
তিনি লিখেন, ক্যাম্পাসে কেউ নিপীড়ক হিসেবে আসে না। সবাই আসে আবরার হয়ে। সিস্টেম তাকে নিপীড়ক বানায়, সিস্টেম তাকে অনিক-অমিত-জিয়ন বানায়।
যাকে মারা হলো এবং যারা মারলো তারা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের মেধাবীদের মধ্যে অন্যতম। যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেই তারা বুয়েটে ভর্তি হয়েছিলো।তারা কেউই বুয়েটে আসার আগে ক্রিমিনাল একটিভিটিজের সাথে জড়িত ছিলো না।
পোস্টে বলা হয়, তাহলে কি কারনে আজকে তারা মেধাবী জিয়ন-অমিত-অনিক থেকে দন্ডপ্রাপ্ত খুনি জিয়ন-অমিত- অনিকে পরিণত হলো? একটাই উত্তর, এই সিস্টেম। তাদের ফাঁসি দেওয়ার আগে আমাদের ফাঁসি দিতে হবে এই সিস্টেমের।ফাঁসি দিতে হবে তাঁদের, যাঁদের দায়িত্ব ছিলো এই সিস্টেমটাকে ধ্বংস করার। ফাঁসি দিতে হবে তাদের, যারা এই সিস্টেম তৈরি করেছে, পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে। আমি অনিকদের ফাঁসি চাই না, আমি জিয়নের ফাঁসি চাই না, আমি ফাঁসি চাই যে সিস্টেম অনিক তৈরি করেছে, সেই সিস্টেমের। সিস্টেম বহাল রেখে হাজার অনিককে গন-ফাঁসি দিলেও কোন লাভ নেই।
তিনি লিখেন, যারা সিনিয়রটির উত্তাপে আরেক মায়ের ছেলের গায়ে হাত তুলতে বাঁধে না তারা এই ছবিটা মনোযোগ দিয়ে দেখেন। অনুধাবন করেন। অন্যায় বাপকেও ছাড়বে না।
হাসনাত লিখেন, এবার যারা প্রথম বর্ষে ভর্তি হচ্ছো তোমাদের কাছে অনুরোধ, নিজের মেরুদণ্ড বিকিয়ে দিবে না, মাথা নত করবে না। ভাইয়ের হুকুমের গোলাম হবে না। ক্ষুদিরামের ভাষায় বলবো, ‘লড়ো। না লড়তে পারলে বলো। না বলতে পারলে লেখো। না লিখতে পারলে সঙ্গ দাও।’ এই সিস্টেমটাকে ভাঙ্গো।