ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানুন

4 hours ago 4

ডায়াবেটিস মেলিটাস (Diabetes Mellitus) একটি দীর্ঘমেয়াদি বিপাকীয় রোগ, যা রক্তে চিনি (গ্লুকোজ) প্রক্রিয়াকরণে সমস্যা তৈরি করে। শরীরে ইনসুলিনের ঘাটতি অথবা ইনসুলিন কাজ না করলে এই রোগ হয়। নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিস শরীরের নানা গুরুত্বপূর্ণ অংশে ক্ষতি করতে পারে।

আরও পড়ুন : কোলেস্টেরল কমাতে পুষ্টিবিদের সহজ পরামর্শ

আরও পড়ুন : তরমুজের বীজ খাওয়া কি নিরাপদ ?

ইনসুলিন হলো এমন একটি হরমোন, যা রক্ত থেকে গ্লুকোজকে কোষে নিয়ে যায়, শক্তি তৈরি বা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করার জন্য। এই প্রক্রিয়ায় সমস্যা হলে রক্তে চিনি বেড়ে যায় — একে বলে হাইপারগ্লাইসেমিয়া (Hyperglycemia)। এটা দীর্ঘমেয়াদে চোখ, কিডনি, স্নায়ু ও রক্তনালিতে ক্ষতি করতে পারে।

ডায়াবেটিসের ধরন

ডায়াবেটিসের কয়েকটি ধরন আছে, যার প্রত্যেকটির কারণ ও চিকিৎসা ভিন্ন:

টাইপ ১ ডায়াবেটিস (Type 1 Diabetes)

এটি একটি অটোইমিউন রোগ। শরীর নিজেই প্যানক্রিয়াসের ইনসুলিন তৈরি করা কোষগুলোকে নষ্ট করে ফেলে।

টাইপ ২ ডায়াবেটিস (Type 2 Diabetes)

সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে শরীর ইনসুলিন ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স)।

লাডা (LADA বা Type 1.5)

ধীরে ধীরে হওয়া টাইপ ১ ধরনের ডায়াবেটিস। সাধারণত বড়দের মধ্যে ধরা পড়ে, অনেক সময় টাইপ ২ মনে করা হয়।

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (Gestational Diabetes)

গর্ভাবস্থায় হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়। সন্তান জন্মের পর সাধারণত সেরে যায়।

ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes Insipidus)

এটি গ্লুকোজ সম্পর্কিত নয়। অতিরিক্ত প্রস্রাব ও পানির ভারসাম্য নষ্ট হওয়া এর প্রধান লক্ষণ।

প্রিডায়াবেটিস (Prediabetes) কী?

প্রিডায়াবেটিস হল এক ধরনের সতর্ক সংকেত। রক্তে চিনি একটু বেশি থাকে, তবে ডায়াবেটিস বলার মতো বেশি নয়। এই সময়ে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা ঠিক রাখলে টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়া রোধ করা যায়।

ডায়াবেটিসের উপসর্গ

সব ধরনের ডায়াবেটিসে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়। তবে কারও ক্ষেত্রে দ্রুত, আবার কারও ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এগোয়।

- অতিরিক্ত পিপাসা ও ক্ষুধা লাগা

- বারবার প্রস্রাব হওয়া

- চোখ ঝাপসা দেখা

- শরীর দুর্বল লাগা

- হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া

- ছোটখাটো ক্ষত ধীরে ভালো হওয়া

- হাত-পায়ে ঝিনঝিন করা (বিশেষ করে টাইপ ২-এ)

টাইপ ১ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস নামের মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিস কেন হয়?

ধরন ভেদে ডায়াবেটিস হওয়ার কারণ ভিন্ন ভিন্ন:

ধরন ও প্রধান কারণ

টাইপ ১: অটোইমিউন, জিনগত বা পরিবেশগত ট্রিগার

টাইপ ২: জিনগত, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, মোটা হওয়া, অলস জীবনযাপন

লাডা: টাইপ ১-এর মতো, ধীরে হয় বলে টাইপ ২ ভেবে ভুল হয়

গর্ভকালীন: গর্ভাবস্থার হরমোন পরিবর্তন

কারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে?

যে কেউ, যে কোনো বয়সে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হতে পারে।

- টাইপ ১ ডায়াবেটিস সাধারণত ছোটবেলায় শুরু হয়, তবে বড় বয়সেও হতে পারে (যেমন: LADA)।

- টাইপ ২ ডায়াবেটিস মূলত বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়, তবে এখন তরুণরাও আক্রান্ত হচ্ছে, বিশেষ করে অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে।

- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সাধারণত ২৫ বছর বা তার বেশি বয়সী নারীদের হয়, তবে ছোট বয়সেও হতে পারে।

আরও পড়ুন : সুস্থ থাকতে রাতে ভাত খাবেন, না রুটি? যা বলছেন পুষ্টিবিদ

আরও পড়ুন : খালি পেটে দুধ চা খাচ্ছেন? জেনে নিন পুষ্টিবিদের সতর্কবার্তা

ডায়াবেটিস একবার ধরা পড়লে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ব্যায়াম, ও চিকিৎসকের পরামর্শে চললে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সময়মতো সচেতনতা আপনাকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখবে।

সূত্র: হেলথলাইন

Read Entire Article