ডায়াবেটিসজনিত পায়ের ক্ষত ও পিআরপি চিকিৎসা

3 months ago 6
বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এই রোগে সবচেয়ে ভয়াবহ জটিলতা হলো ডায়াবেটিক ফুট আলসার বা ডায়াবেটিসজনিত পায়ের ক্ষত। অনেক সময় এই ক্ষত থেকে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে এবং শেষমেশ অ্যামপুটেশন বা পা কেটে ফেলার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নিলে এ অবস্থা এড়ানো যায়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে পিআরপি (প্লাটিলেট রিচ প্লাজমা) এই রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এটি একটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে রোগীর নিজের শরীরের রক্ত থেকে সংগ্রহ করা প্লাটিলেটসমৃদ্ধ অংশ ক্ষতের ওপর প্রয়োগ করা হয়। পিআরপি কীভাবে তৈরি হয়: রোগীর শরীর থেকে ২০ থেকে ৩০ মিলি রক্ত নেওয়া হয়। এটি বিশেষ যন্ত্রের (সেন্ট্রিফিউজ) মাধ্যমে ঘুরিয়ে রক্তের বিভিন্ন অংশ পৃথক করা হয়। ওপরের স্তরে থাকা প্লাটিলেট-সমৃদ্ধ প্লাজমা সংগ্রহ করে ক্ষতের জায়গায় প্রয়োগ করা হয়। এতে থাকে প্রচুর গ্রোথ ফ্যাক্টর, যা রক্তনালি তৈরি, কোষের বৃদ্ধি ও ক্ষতস্থান পুনর্গঠনে সহায়তা করে। ডায়াবেটিসজনিত ক্ষতে পিআরপি কেন কার্যকর: ডায়াবেটিক রোগীদের রক্ত চলাচল ও কোষ পুনর্গঠন ধীরগতির হয়। পিআরপি ক্ষতের আশপাশে নতুন কোষ ও রক্তনালি তৈরিতে সহায়তা করে। বিশেষ করে সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক। পিআরপি প্রয়োগে ক্ষতের শুকিয়ে ওঠা দ্রুততর হয়। কখন পিআরপি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়: যদি ক্ষত গভীর না হয় এবং অস্থি বা সন্ধি প্রকাশিত না হয় এবং ক্ষতের চারপাশে কিছুটা হলেও রক্ত চলাচল থাকে। রোগীর রক্তে যদি শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে, ইনফেকশন নিয়ন্ত্রণে থাকলে (অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে) পিআরপি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। যখন পিআরপি উপকার করে না: যদি পায়ের আঙুল বা পায়ের হাড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে, যদি রোগীর রক্তে শর্করা অত্যধিক বেশি থাকে, ক্ষতের চারপাশ সম্পূর্ণ মরে গেলে, পিআরপি দেওয়ার পরও নিয়মিত ড্রেসিং ও পায়ের যত্ন না নেওয়া হলে পিআরপি উপকার করে না। পিআরপি কোনো ম্যাজিক নয়, এটি একটি সহায়ক চিকিৎসা ব্যবস্থা। উপযুক্ত রোগী নির্বাচনের মাধ্যমে এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে পিআরপি প্রয়োগ করা হলে পা কাটার মতো ভয়াবহ পরিণতি অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। ডা. আশরাফুল হক সহকারী অধ্যাপক ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
Read Entire Article