খাঁচায় বন্দি রেখে পাখি পালন করা কি জায়েজ আছে?
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীকেই স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার দিয়েছেন। আকাশের নীল মায়ায় পাখিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়, কিচিরমিচির সুরে মন ভরিয়ে তোলে। কিন্তু আজকাল আমাদের সমাজে দেখা যায়, শখের বসে এই স্বাধীন প্রাণীদের লোহার খাঁচায় বন্দি করে রাখা হচ্ছে। টিয়া, ময়না কিংবা নানা রঙের বিদেশি পাখি ধরে এনে চার দেয়ালের ভেতরে আটকে রাখা হচ্ছে কেবল মানুষের আনন্দের জন্য।
অথচ ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে প্রাণীর প্রতি দয়া দেখাতে, তাদের কষ্ট না দিতে। তাই প্রশ্ন জাগে, আমাদের এই শখ কি আল্লাহর বানানো প্রাণীর হক নষ্ট করছে না? পাখিদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে আনন্দ করা কি ইসলামের চোখে বৈধ, নাকি জুলুমের নামান্তর?
চলুন তাহলে জেনে নিই, খাঁচায় বন্দি রেখে পাখি পালন জায়েজ আছে কি না—
প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, খাঁচার ভেতরে সেই সমস্ত পাখি পুষতে পারেন, যে পাখিগুলো সাধারণত বাইরে অন্যান্য পাখিদের সঙ্গে উড়ে আত্মরক্ষা করতে পারে না। যেমন টিয়া পাখির কথা বলতে পারেন। এরা নরমালি অন্যান্য পাখিদের মতো উড়ে আত্মরক্ষা করতে পারে না।
কিন্তু যে পাখিগুলো নরমালি উড়ে বেড়ায়, নিজেকে আত্মরক্ষা করতে সামর্থ্যবান, এজাতীয় পাখিকে খাঁচায় বন্দি রেখে পালন করা যাবে না। এটা জুলুম হবে।
কিছু কিছু মানুষ আছে, পাখি ধরে নিয়ে আসতেছে কিন্তু বাচ্চা পাখি থেকে যাচ্ছে, আবার বাচ্চা ধরে নিয়ে আসতেছে মা-পাখি থেকে যাচ্ছে—নবীজি (সা.) এমনটা করতে নিষেধ করেছেন। মনে রাখতে হবে, আমাদের ফূর্তি যেন তাদের কষ্টের কারণ না হয়।
খাঁচায় পাখি পালার শর্ত ও নিয়ম
শখের বশে খাঁচায় পাখি পালতে গেলে যথাযথভাবে পাখিগুলোর পরিচর্যা করতে হবে। দানাপানি দিতে না পারলে বা আদর-যত্ন সম্ভব না হলে কিংবা কোনো কারণে পাখি কষ্ট পেলে খাঁচায় আটকে রাখা জায়েজ হবে না। বরং ছেড়ে দেওয়া আবশ্যক।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সে তাকে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে বিড়ালটি মারা গিয়েছিল, পরিণতিতে নারী তারই কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করল। সে যখন তাকে বেঁধে রেখেছিল, তখন তাকে আহার ও পানি দিত না এবং তাকে ছেড়েও দিত না যে, সে কীটপতঙ্গ ধরে খাবে।’ (বোখারি : ২৩৬৫, মুসলিম : ২২৪২)