ডিবি অফিসে ভয়ংকর নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন সমন্বয়ক নূর নবী

1 month ago 22

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ক্যাম্পাস থেকে তুলে নেওয়া হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক নূর নবীকে। এরপর ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে ভয়ংকর নির্যাতনের পর পাঠানো হয় কারাগারে।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের এ শিক্ষার্থী।

নূর নবী বলেন, ‘আমাকে বিদ্যুতের শক দেয়। হাতে একটা ইনজেকশন দেয়। বার বার মনে হচ্ছিল আমি মরে যাবো।’

সংবাদ সম্মেলনে এ সমন্বয়ক বলেন, ‘আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এডিসি বদরুল আমাকে ডেকে নেন। ডিবির পাঁচটা গাড়ি এসেছিল। তারা আমাকে এখান থেকে উঠিয়ে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে উঠিয়েই আমাকে মারধর শুরু করে।’

তিনি বলেন, ‘যখন আমাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়, তখন আমি ভেবেছিলাম গাড়িতে যে টর্চার করা হয়েছে, এর চেয়ে বেশি টর্চার আর হতে পারে না। আমাকে হয়তো এখন তারা ছেড়ে দেবে, না হয় গ্রেফতার দেখাবে।’

‘কিন্ত এর চেয়ে পাশবিক নির্যাতন যে তারা করতে পারে, তা আমার কল্পনায় ছিল না। আমাকে যখন ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যায়, তখন চোখে কালো কাপড় বেঁধে দেয়। শুরুতে এক চেয়ারে বসিয়ে আমার শরীরের সব কাপড়চোপড় খুলে ফেলে।’

আরও পড়ুন

নূর নবী বলেন, ‘আমাকে মারছিল আর বার বার বলছিল, তোর তথ্য আমরা অনেক দিন থেকে শুনেছি, ক্যাম্পাস থেকে কয়েকজন তোর কথা আগেই বলেছে। তুই জঙ্গি, তুই শিবির। শেষ পর্যন্ত তারা আমাকে বলেছে, তুই ছাত্রদল করিস। তারা যেভাবে আমাকে মেরেছিল, আমি ভেবেছিলাম আমার পায়ের অংশ পচে যাবে বা কেটে ফেলতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে চিত করিয়ে শুইয়ে বলে তোর এক হাত তো ছাত্রলীগ ভেঙেছে, আরেক হাত আমরা ভেঙে দেবো। আমার নাভির নিচ থেকে হাঁটু পর্যন্ত মারধর করে। রুটি যেভাবে বেলা হয় ঠিক সেভাবে আমার হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত লাঠি দিয়ে চাপ দেয়। আমি কান্না করলেই বলতো তোকে মেরেই ফেলবো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাকে এভাবে মারত।’

‘পুলিশ গত ১৫ জুলাই থেকে আমার ফোন ট্র্যাক করছিল। অনেকের বাসায় ছাত্রলীগ কর্মীরা বন্দুক তাক করে। আমি আমার মায়ের কাছ থেকে ১৭ জুলাই বিদায় নিয়েছিলাম এই বলে যে, আমি মরে গেলে কেঁদো না। আর বেঁচে থাকলে বিকেলে ফোন দেবো। এই ভয়েস রেকর্ডটা তারা শুনিয়ে শুনিয়ে মেরেছে। একপর্যায়ে ওরা আমার হাত-পা দুই দিক করে পা দিয়ে চেপে ধরে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘পরবর্তীতে তারা আমার থেকে বিএনসিসির কার্ড পায়। তখন বলে, আমি এত শক্ত কেন? এ জঙ্গি, সে জঙ্গি ট্রেনিং নিয়েছে। আমি এটা বলতে পারিনি যে আমি সেনা মহড়ায় অংশ নিয়েছি, আমি অন্তত জঙ্গি হতে পারি না। আমাকে উলঙ্গ অবস্থায় রেখে দেয়। একদিন বিকেলে তৎকালীন ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ এসে বলেন- একে বাঁচিয়ে রাখছো কেন? একে ক্রসফায়ার দে। আমার দুই হাঁটুতে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ওরা ভেঙে ফেলে। আমি ভেবেই নিয়েছিলাম আমাকে মেরেই ফেলবে।’

তিনি বলেন, ‘কারাগারে নেওয়ার পর আমি অনেক গার্ডকে কান্না করে বলেছি, আমাকে হাসপাতালে নেন। আমাকে হাসপাতালে নেয়নি। কারাগারে পানিতে মরিচ দিয়ে রাখা হতো যেন পানি খেতে না পারি, গোসল করতে না পারি।’

নূর নবী আরও বলেন, ‘ডিবি পুলিশ আমাকে বলে, তোকে ক্রসফায়ার দেবো। তুই রেডি হয়ে নে। আমরা ছয়জন ছিলাম মোট। রমনায় নিয়ে আমাদের চোখ খুলে দেওয়া হলো। আমার হাতে পেট্রোল বোমা ধরিয়ে দিলো, ভিডিও করা শুরু করলো। তারা যে এভাবে মামলা সাজাবে আমি ভাবতেও পারিনি। দেশের ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ এ রকম পর্যায়ে যাবে ভাবিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ দেশের মানুষের আস্থার জায়গা হওয়া উচিত ছিল। যাই হোক তারা আমাকে মারেনি, আমি বেঁচে ফিরেছি। স্বাধীন দেশে আবার ফিরতে পেরেছি। এটা আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা।’

আরএএস/কেএসআর/এমএস

Read Entire Article