ডিসেম্বরে ৩ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে বড় প্রতিবন্ধকতা সময়

3 weeks ago 10

জ্বালানি খাতের সংকটের মধ্যে ডিসেম্বর নাগাদ ৩ হাজার মেগাওয়াট নতুন ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করে সরকার। যা নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যানশিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)। তবে নানাবিধ চ্যালেঞ্জ থাকায় এ পরিকল্পনা উচ্চাভিলাষী কি না তা পর্যালোচনা প্রয়োজন।

সোমবার (১৮ অগস্ট) আইইইএফএ থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের নতুন ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ কর্মসূচি নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিকে আরও জোরালো করেছে; যদিও এ খাতে সাফল্য এখনো সীমিত। ২০২৫ সালের জুনে রেকর্ডকৃত ২৪৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার তুলনায় মাত্র ছয় মাসেরও কম সময়ে নতুন করে ৩ হাজার মেগাওয়াট ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের জন্য ১২ গুণেরও বেশি সক্ষমতা বাড়াতে হবে।

সরকারি অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত বিদ্যুৎ চাহিদা ১,৫০০ মেগাওয়াটেরও কম। ফলে এ ভবনগুলোতে অনুমোদিত লোডের পরিমাণ ৩,০০০ মেগাওয়াটের তুলনায় অনেক কম হবে। কাজেই নেট মিটারিং নীতিমালার আওতায় এসব ভবনে ৩,০০০ মেগাওয়াট ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুতের সক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনা সীমিত।

ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ ২০৪০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের প্রকৃত সম্ভাবনা ক্যাপেক্স মডেলে রক্ষণাবেক্ষণ সমস্যাসহ আরও বেশ কিছু বিষয় এখন ও অজানা থাকায় এ খাতের অংশীদারদের উদ্বেগ দূর করতে বাংলাদেশ সরকার প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ১৭ বছরে বাংলাদেশে মাত্র ২৪৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার ছাদভিত্তিক সৌর বিদ্যুৎ স্থাপিত হয়েছে। অথচ ২০২৫ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ৩,০০০ মেগাওয়াট ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা অর্জনে পূর্বের তুলনায় ১২ গুণেরও বেশি দ্রুত উদ্যোগ প্রয়োজন।

আইইইএফএ-এর বাংলাদেশের প্রধান জ্বালানি বিশ্লেষক ও প্রতিবেদনের লেখক শফিকুল আলম বলেন, সরকারি অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পর্যাপ্ত অনুমোদিত লোড না থাকায় ৩,০০০ মেগাওয়াট ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ অর্জন সম্ভব নয়। তাই টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) এসব ভবনে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের বাস্তব সম্ভাবনা যাচাই ও নথিভুক্ত করতে পারে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, তহবিল বরাদ্দ, দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন, কার্যাদেশ দেওয়া ও প্রকল্প বাস্তবায়নে ডিসেম্বর ২০২৫-এর সময়সীমা বাড়ানো প্রয়োজন হবে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে মাত্র ১৫–২০টি উচ্চমানের প্রকৌশল, ক্রয় ও নির্মাণ (ইপিসি) কোম্পানি রয়েছে যারা ছয় মাসের কম সময়ে ৩,০০০ মেগাওয়াট ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করতে সক্ষম নাও হতে পারে। নতুন কর্মসূচির আওতায় সরকারি অফিসগুলো সরকারি তহবিলের সহায়তায় ক্যাপেক্স মডেলে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করবে। অন্যদিকে হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রাথমিক ব্যয় ছাড়াই ওপেক্স মডেলে পরিচালিত হবে।

উভয় মডেলের সুবিধা ও সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, ক্যাপেক্স মডেলে দ্রুত বাস্তবায়ন ও আর্থিক সাশ্রয়ের সুযোগ বেশি থাকলেও সমন্বয়ে ঘাটতি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং তড়িঘড়ি করে ডেভেলপার নির্বাচনের কারণে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ওপেক্স মডেল গুণগত মান নিশ্চিত করবে। তবে এতে সাশ্রয় কম হবে এবং গ্রামীণ এলাকায় অর্থায়নে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। লোডশেডিংয়ের সময় ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করা যাবে না বিধায় গ্রামীণ এলাকায় ওপেক্স মডেলে বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে। ছোট ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রকল্পেও বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাতে পারেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধুলাবালি বা ময়লা জমার কারণে বার্ষিক সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে। তাই ক্যাপেক্স মডেলের আওতায় বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মাসিক সঞ্চয় থেকে একটি তহবিল তৈরি করে দীর্ঘমেয়াদি রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করার সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একইসঙ্গে গ্রামীণ এলাকায় লোডশেডিং সমস্যা সমাধানে সরকারের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

আইইইএফএ প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় বাস্তবায়িত এবং চলমান প্রকল্পগুলো থেকে অভিজ্ঞতা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। এসব দেশে বিদ্যুৎ মিশ্রণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান ৪৭ শতাংশ থেকে ৬৩ শতাংশ। পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা দেখায় জ্বালানি সংকট ও উচ্চ বিদ্যুতের ট্যারিফ সৌরবিদ্যুৎ সম্প্রসারণে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। শ্রীলঙ্কায় বহুপাক্ষিক সংস্থার ঋণ এ খাতে অর্থায়নের বাধা মোকাবিলায় সহায়তা করে। পরে সরকারি ভবনে ছাদভিত্তিক বিদ্যুতের জন্য শ্রীলঙ্কার সরকার নিজস্ব তহবিল প্রদান করেছে।

অন্যদিকে ভারতে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ছাদভিত্তিক বিদ্যুতের সক্ষমতা ১৮,০০০ মেগাওয়াট অতিক্রম করেছে যা ধারাবাহিক নীতি ও সরকারি সহায়তার ফল।

শফিকুল আলম জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ খাত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তাই কর্মসূচির সফলতার জন্য সরকারি সংস্থা ও অংশীজনদের সক্ষমতা উন্নয়ন অপরিহার্য। পাশাপাশি প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে স্বাধীন মনিটরিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।

এনএস/এমআইএইচএস/জিকেএস

Read Entire Article