ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি নারীর, আক্রান্ত বেশি পুরুষ

2 weeks ago 12

ডেঙ্গু এখন আর বর্ষাকালের রোগ নয়। এডিস মশার কামড়ে সারা বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। অনেক আগেই ডেঙ্গু রাজধানী ঢাকা পেরিয়ে ছড়িয়েছে প্রত্যন্ত গ্রামেও। এই ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পুরুষরা। কিন্তু মৃত্যু বেশি হচ্ছে নারীদের।

চলতি মাসের প্রথম আট দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে চার হাজার ৭৫৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪১ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৬ হাজার ২২৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৫২৯ জনের। এর মধ্যে নভেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি ১৭৩ জন রোগী মারা গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অক্টোবর মাসে মারা যায় ১৩৫ জন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে অক্টোবর মাসে, ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নভেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ৬৫২ জন। অক্টোবর ও নভেম্বরের সেই রেশ এখনো রয়ে গেছে।

আক্রান্ত বেশি পুরুষ, মৃত্যু বেশি নারীর

পুরুষরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও বেশি মারা যাচ্ছে নারীরা। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে ৬০ হাজার ৩৯৩ জন বা ৬৩ দশমিক ২০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৫ হাজার ২৩৯ জন বা ৩৬ দশমিক ৮০ শতাংশ নারী। কিন্তু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ২৭০ জন বা ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ নারী এবং ২৫২ জন বা ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ পুরুষ।

১৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত নারী-পুরুষের বয়সভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ১ জানুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়েছে ৯৫ হাজার ৬৩২ জন। এর মধ্যে ৫৭ হাজার ৭২৪ জন বা ৬০ দশমিক ৩৬ শতাংশের বয়সই ১৬ থেকে ৪০ বছর। এই বয়সী আক্রান্তদের মধ্যে ৩৭ হাজার ৭৫৬ জন বা ৬৫ দশমিক ৪১ শতাংশ পুরুষ ও ১৯ হাজার ৯৬৮ জন বা ৩৪ দশমিক ৫৯ শতাংশ নারী।

ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি নারীর, আক্রান্ত বেশি পুরুষ

১ জানুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত ৫২২ জনের মধ্যে ২১০ জন বা ৪০ দশমিক ২৩ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছর। এর মধ্যে নারী ১২৩ জন বা ৫৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ, পুরুষ ৮৭ জন বা ৪১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বেশি আক্রান্ত উত্তর সিটিতে, মৃত্যু বেশি দক্ষিণে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে। অন্যদিকে, মৃত্যু বেশি হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে। উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০ হাজার ২০২ জন এবং দক্ষিণে ১৬ হাজার ৮৪৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মারা গেছে ২১৯ জন। উত্তরে মারা গেছে ৯৬ জন। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে ১৭ হাজার ৫৬৯ জন, মৃত্যু ৪৭ জনের।

সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ হাজার ৭০৩ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে আক্রান্ত আট হাজার ২৭৬ জন, মৃত্যু ৫৭ জনের। সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে খুলনা বিভাগে আক্রান্ত নয় হাজার ৪০১ জন, যার মধ্যে মারা গেছে ৩০ জন।

সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ময়মনসিংহ বিভাগে তিন হাজার ১৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে রংপুর বিভাগে এক হাজার ৪৭৪ জন, রাজশাহী বিভাগে তিন হাজার ৬০৪ ও সিলেট বিভাগে ৩১৮ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রাজশাহী ও রংপুরে মারা গেছে নয়জন।

বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় ২০২৩ সালে। ওই বছর ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল ১ লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৩০০ জনের মৃত্যু হয়।

২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ১০৫ জনের মৃত্যু হয়।

এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ২৮১ জন।

এমএমএআর/এএসএম

Read Entire Article